১৯৭১ সালের শেষ মাসটিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে জড়িয়েছিল দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। চল্লিশের দশকের শেষভাগ থেকেই পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের বিরোধকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। তারপর থেকেই তারা ছিল একে অন্যের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।

মুক্তিযুদ্ধ তার শেষ পর্যায়ে পৌঁছালে তারা আরো একবার সুযোগ পেয়ে যায় শক্তি প্রদর্শনের। ইতোমধ্যে ভারত প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় পাকিস্তানের দিকে। এসবকে কেন্দ্র করে ভারত মহাসাগরে দুই পরাশক্তি নিজেদের নৌশক্তির প্রদর্শনী চালায়, আর হাজার মাইল দূরের জাতিসংঘ সদরদপ্তরে তখন চলতে থাকে কূটনৈতিক যুদ্ধ। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম দুটি সপ্তাহ ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ন আর নাটকীয়তায় ভরা। সেই মুহূর্তগুলো নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছিল। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের পর থেকেই পূর্ববাংলার আশ্রয়প্রার্থী মানুষের প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সহায়তার হাত প্রসারিত করেছিলেন। এককোটিরও বেশি শরণার্থীকে ভারত পুরো নয়মাস জুড়ে আশ্রয় দিয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দিয়েছে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ। নভেম্বর মাস থেকে নিজেই আমাদের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়েছে যুদ্ধে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান

কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে ভারত পরিণত হয় বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূলে। কারণ পাকিস্তান অনেকদিন ধরেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছের বন্ধু। তাই তাদের বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধে যখন ভারত পূর্ববাংলার নিপীড়িত মানুষকে সমর্থন দিলো, স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সেটি পছন্দ হয়নি। বিষয়টি ভারতেরও বুঝতে কষ্ট হয়নি মোটেই। তাই তারাও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন পাওয়ার আশায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক ছিল অনেকদিন ধরেই। তবে এই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায় ১৯৭১ সালে এসে।

দীর্ঘদিনের আলোচনা ও সমঝোতার পর অবশেষে ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট স্বাক্ষরিত হয় বহুকাঙ্ক্ষিত ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি। এই চুক্তিটার বেশ বড়সড় একটা গুরুত্ব ছিল এই কারণে যে, চুক্তির তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছিল, ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কেউ যদি বিদেশি শক্তি কর্তৃক আক্রান্ত হয় তাহলে অপর দেশ তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। এটা ছিল ভারতের জন্য বিশাল এক কূটনৈতিক বিজয়। কারণ এর মাধ্যমে ভারত এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় যে পাকিস্তানের দুই বন্ধুদেশ যুক্তরাষ্ট্র অথবা চীন যদি পাকিস্তানের ভাঙন ঠেকাতে ভারতে আক্রমণ করে বসে, তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষে তা মোকাবিলা করবে। ফলে ভারত নিজের নিরাপত্তা নিয়ে যে আশঙ্কার মধ্যে ছিল তা অনেকাংশেই কেটে যায়।

এরপর থেকে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অস্ত্র ও অর্থ সমর্থন আরো বাড়িয়ে দেয়। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি পশ্চিমা দেশ সফর করেন। এই সফরের লক্ষ্য ছিল বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা, এতে ভারতের সমর্থনের যৌক্তিকতা এবং শরণার্থী সমস্যার বিষয়গুলো তুলে ধরা। এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রকে তেমন প্রভাবিত করতে না পারলেও বাকি দেশগুলো, বিশেষত ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মৌন সমর্থন তিনি আদায় করতে সক্ষম হন, যার প্রতিফলন পরবর্তীতে জাতিসংঘে দেখা যায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং সোভিয়েত প্রিমিয়ার লিওনিদ ব্রেজনেভ

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, বিকেলবেলা। ইন্দিরা গান্ধী তখন কলকাতার ব্রিগেড মাঠে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন। এমন সময় পশ্চিম সীমান্তে ভারতের ১১টি বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তান “অপারেশন চেঙ্গিস খান” নামে বিমান হামলা শুরু করে। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত নয়াদিল্লি রওনা হন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান তাঁকে এসকর্ট করে নিয়ে যায়। নয়াদিল্লি পৌঁছে তিনি তিন বাহিনী প্রধান ও মন্ত্রীসভার সাথে আলোচনা করেন। তারপরই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। তিন বাহিনী প্রধান অধীনস্থদেরকে জানিয়ে দেন, “পাল্টা আঘাত করো। সর্বশক্তি দিয়ে পাল্টা আঘাত করো”।

ভারতের বিমানঘাঁটিগুলোতে পাকিস্তানের এই হামলার কারণ ছিল পরিষ্কার। পূর্ব পাকিস্তানে তখন তাদের সেনাবাহিনীর ভয়াবহ অবস্থা, কদিনের মধ্যেই তাদের পতন ঘটবে সেটা তারাও বুঝে গেছে। আর সেরকম হলে স্বাধীন হয়ে যাবে পূর্ব পাকিস্তান। এজন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধটা শুরু করে। এর ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বানিয়ে দিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে নেওয়া যাবে। আর যুদ্ধবিরতি হলেই আর হাতছাড়া হবে না পূর্ব পাকিস্তান। এই চিন্তা থেকেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যুদ্ধটাকে পশ্চিম সীমান্তে নিয়ে যান।

ভারত যুদ্ধ ঘোষণার পর ৪ ডিসেম্বর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটা বার্তা পাঠান। এতে বলা হয়, “পাকিস্তানের সর্বশেষ আক্রমণের সমুচিত জবাব প্রদানে ভারতীয় বাহিনী এবং বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর মিলিত ভূমিকা সফলতর হতে পারে, যদি এই দুটি দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়”। স্পষ্টতই এতে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়টিই বলা হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বরেই ভারত কাজটি সম্পন্ন করে। একইদিনে ভুটানও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার

 

ওদিকে নভেম্বর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুদেশ পাকিস্তানকে সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিল। পাকিস্তানে নতুন করে অস্ত্র সরবরাহের চিন্তাভাবনাও করা হয়। কিন্তু বিশ্বমিডিয়ার কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ তখন পূর্ব পাকিস্তানে ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের কথা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। এমনকি ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি শরণার্থীদের দেখতে ভারত পর্যন্ত এসে ঘুরে গেছেন। কাজেই মার্কিন সরকার পাকিস্তানের যতই পক্ষপাতী হোক, জনমত ছিল পূর্ববাংলার মানুষের পক্ষেই। তাই তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানের জন্য বড় সরবরাহ পাঠানো ছিল কঠিন। এজন্য প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার অন্য চিন্তা করতে থাকেন। ১৩ নভেম্বর থেকেই ভিয়েতনামে মোতায়েন মার্কিন নৌবাহিনীর সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে পাঠিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কাজে লাগানোর চিন্তা শুরু করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

৪ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কার্যনির্বাহী উপসংস্থা ‘ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ’ (WSAG) এর বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের পক্ষে এডমিরাল জুমওয়াল্ট পাকিস্তানের সামরিক সরবরাহ পরিস্থিতি এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সঙ্গীন হয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার খুব ব্যস্ত ছিলেন যেকোনোমূল্যে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে। সেদিনের বৈঠক শেষে তাঁর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে উপমহাদেশের চলমান সংঘাতপূর্ণ অবস্থার জন্য ভারতকে দায়ী করা হয়।

একইদিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। এখানে মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ বুশ অবিলম্বে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, দুইদেশের সৈন্যদের নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদানে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাব মূলত ছিল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনারই রূপায়ন। কারণ যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়ে গেলে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতাও আটকে যাবে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। তাই তারা এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে যুদ্ধবিরতি আটকে দেয়। ভেটো দেওয়ার কারণ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বলে, সমস্যার মূল কারণ, তথা পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের ওপর দীর্ঘ নির্যাতন এবং তার ফলে সৃষ্ট শরণার্থীর ভিড় ও সমস্যায় জর্জরিত ভারতের অবস্থা বিবেচনা না করে ভারত এবং পাকিস্তানকে একই মানদণ্ডে বিচার করায় এই প্রস্তাবটি একটি একতরফা প্রস্তাবে পরিণত হয়েছে। তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন এই একতরফা যুদ্ধবিরতি মানবে না। পোল্যান্ডও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভোটদানে বিরত থেকে নীরবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথেই সম্মতি জানায়।

পরদিন ৫ ডিসেম্বর আবারও নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে, যেখানে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে এমন এক রাজনৈতিক নিষ্পত্তির প্রয়োজন যার ফলে নিশ্চিতভাবেই বর্তমান সংঘর্ষের অবসান ঘটবে। পোল্যান্ড প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, বাকি সদস্যরা ভোটদানে বিরত থাকে। কিন্তু চীন এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিয়ে সোভিয়েত উদ্যোগকে আটকে দেয়। একই অধিবেশনে আবারও আটটি দেশ পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন আগেরদিনের মতোই তাতে ভেটো প্রদান করে।

সেদিনই সোভিয়েত সরকার তাদের বার্তাসংস্থা ‘তাস‘-এর মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংকটময় পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানকে দায়ী করে। একইসাথে ‘পূর্ব বাংলার জনগণের আইনসঙ্গত অধিকার এবং স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে’ চলমান সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দাবি জানায়। এই সংঘর্ষ সোভিয়েত সীমান্তের কাছে সংঘটিত হওয়ায় এর সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত জানিয়ে পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে বাকি দেশগুলোকে বিবদমান পক্ষদ্বয়ের যে কোনোটির সাথে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানায় দেশটি। এর মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য মিত্রদেশগুলোকে পাকিস্তানের সাহায্যে এগিয়ে না আসার আহবানই করা হয়েছিল।

৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারত সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। একইদিন পূর্ববাংলায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পতন ঘটে। ভারতের বিমান হামলায় তাদের রানওয়েগুলো বিধ্বস্ত হওয়ায় পাকিস্তানের বিমানগুলো ওড়ার ক্ষমতা হারায়। এরপরই মূলত পাকিস্তানি সৈন্যরা উপকূলের দিকে পেছাতে থাকে। কারণ তাদের আশা ছিল, দক্ষিণে সমুদ্রের দিক থেকে মার্কিন সাহায্য আসবে।

একইদিন মার্কিন সরকারের WSAG এর বৈঠকে পাকিস্তানের সমর্থনে সামরিক হস্তক্ষেপের উপায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। যথারীতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার আলোচনার অগ্রভাগে থাকেন। সিদ্ধান্ত হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হবে। এর অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভকে এক বার্তায় জানান, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ভারতকে সামরিকভাবে নিষ্ক্রিয় না করে, তাহলে পরবর্তী বছরের মে মাসে মস্কোয় অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন-সোভিয়েত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যোগদান করবে না।

৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ যশোর সেনানিবাসের পতন ঘটে। যৌথবাহিনীর অভিযানের খবরে সেখানকার পাকিস্তানি সেনারা খাবার ফেলেই পালিয়ে যায়। বিনাযুদ্ধে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি যৌথবাহিনীর হাতে আসে। যশোর থেকে পাকিস্তানি সেনারা পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে পালাতে থাকে। যশোরের পতনের খবরে পাকিস্তানি সামরিক হাইকমান্ড আরো শঙ্কিত হয়ে পড়ে। গভর্নর আবদুল মালেক নিয়াজিকে উদ্বৃত করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে জানান, আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে বৈদেশিক সামরিক সহায়তা না পৌঁছালে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। ইয়াহিয়ার দপ্তর থেকে এই বার্তা সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজে পাঠানো হয়। এর অর্থটাও ছিল পরিষ্কার – সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ চায় পাকিস্তান।

চীনও ছিল পাকিস্তানের বড় এক বন্ধু। পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় তখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের আশা দেখা দিচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রও বুঝতে পারছিল চীনকে মিত্র হিসেবে পেলে এশিয়ায় তাদের প্রভাববলয় আরো বিস্তৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে চীন পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রও যেন পাকিস্তানি জান্তাকে সমর্থনের ক্ষেত্রে আরেকটু শক্ত ভিত পায়। ভারতের উত্তরাঞ্চল দিয়ে পাকিস্তানের সমর্থনে চীনের আক্রমণ অসম্ভব ছিল না। কিন্তু চীন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না একটা কারণে – সোভিয়েত ইউনিয়ন। চীনের প্রতিবেশী এই দেশটি ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কাজেই তারা ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যে চুপ করে বসে থাকবে না তা-ও তারা জানতো। তাই তারা ছিল দোলাচলে। যাই হোক, এতকিছুর পরও পশ্চিম পাকিস্তানি প্রশাসন পূর্ববাংলায় নিয়োজিত নিয়াজির সৈন্যদের বারবার আশ্বস্ত করতে থাকে যে, “দক্ষিণদিক থেকে মার্কিন আর উত্তরদিক থেকে চীনা সাহায্য আসছে। অতএব, কয়েকটা দিন মাটি কামড়ে লড়াই করো”।

৭ ডিসেম্বরেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা এক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ১০৪-১১ ভোটে পাশ হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, ভারত, ভুটান এবং কয়েকটি কমিউনিস্ট দেশ এর বিপক্ষে ভোটপ্রদান করে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ আরো আটটি দেশ যথারীতি ভোটদানে বিরত থাকে। এই ভোটাভুটির ফলাফল থেকে একটা বিষয় বোঝা যায়, বিশ্ববাসী তখনো পূর্ব পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি এবং পাকবাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত ছিল না৷ আর তাই প্রকৃত অবস্থা না জানলে সাধারণ বিবেচনায় যে কেউই যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবকে সমর্থন করবে সেটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আরেকটি বিষয়, বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার মতো অবস্থা তখনো বেশিরভাগ দেশেরই হয়নি। ফলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি পাশ হয়। কিন্তু যুদ্ধ তাতে বন্ধ হয়ে যায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ছিল নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতি।

পরদিন ৮ ডিসেম্বর পূর্ববাংলায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আরো কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কয়েকটি শহরের পতন ঘটে। অবস্থা তখন এমন যে যেকোনো সময় মিত্রবাহিনীর ঢাকা অভিযান শুরু হয়ে যাবে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই ইয়াহিয়া খান ‘শাসনক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে’ নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং জুলফিকার আলী ভূট্টোকে উপপ্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। একইদিন ভারতীয় সরকার জানায়, পূর্ববাংলায় যদি পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজয় স্বীকার করে নেয়, তাহলে ভারতও যুদ্ধ বন্ধ করবে। পাকিস্তানের কোনো ভূখণ্ড দখলের অভিপ্রায় ভারতের নেই।

সেদিনই মার্কিন মুলুকে WSAG এর আবার বৈঠক হয়। এখানে জানানো হয় যে পূর্ববাংলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থা সত্যিই খুব শোচনীয়, এমন অবস্থায় তারা মার্কিনদের সহায়তা প্রত্যাশা করছে। ফলে রিচার্ড নিক্সন এবার তাঁর শেষ অস্ত্রটি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন, যে অস্ত্রের নাম সপ্তম নৌবহর। ৯ ডিসেম্বর সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার এডমিরাল থমাস মুরার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর তার বহর নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হন। সপ্তম নৌবহর মূলত প্রেরিত হয়েছিল পাকিস্তানকে সহায়তার উদ্দেশ্যে। এখানকার শক্তিশালী জাহাজ ও বিমানগুলো পূর্ববাংলায় বা ভারতে আক্রমণ করলে ভারতের অবস্থাও যে শোচনীয় হয়ে উঠবে তা কোনো পক্ষেরই অজানা ছিল না। যাই হোক, উত্তেজনায় ভরা মুহূর্তে সপ্তম নৌবহরের প্রবেশের ফলে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়।

মার্কিন নৌবাহিনীর এই সপ্তম নৌবহর যে কতটা শক্তিশালী ছিল তা একটু দেখা যাক। এই নৌবহরে ছিল –

– একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার (ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ), যাতে ছিল এফ-৪ ফ্যান্টমসহ ৯০টি শক্তিশালী যুদ্ধবিমান

– দুটি অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শীপ, যেখানে ছিল দুই হাজার মার্কিন মেরিন সেনা এবং ২৫টি হেলিকপ্টার

– একটি নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন

– তিনটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ার

– চারটি গান ডেস্ট্রয়ার

– একটি অ্যামুনিশন শীপ

– একটি অয়েল ট্যাংকার

কিন্তু মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জন্য বঙ্গোপসাগর ছিল চার-পাঁচ দিনের পথ। ৯ ডিসেম্বর তারা যখন যাত্রা শুরু করে তখন পূর্ববাংলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরো সংকুচিত হয়ে পড়েছে, সবদিক থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ চলছে। এরই মধ্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর, দাউদকান্দী অঞ্চল মুক্ত করে যৌথবাহিনী ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ১০ ডিসেম্বর রায়পুরায় ভারতীয় বাহিনীর চতুর্থ কোরের একাংশ হেলিকপ্টার দিয়ে এবং বাকি অংশ স্থানীয় জনগণের নৌকা সহায়তায় মেঘনা পার হয়। ঢাকায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা এতে আরো ঘনীভূত হয়। ঢাকা তখন যৌথবাহিনীর আরো নিকটে চলে আসে। একইসাথে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় বিমান বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালাতে থাকে।

রায়পুরায় ভারতীয় বাহিনীর অবতরণ এবং ঢাকা শহরে ভারতীয় বিমানের বোমাবর্ষণের ঘটনায় ঢাকার পাকিস্তানি হাইকমান্ড বিমর্ষ হয়ে পড়ে। সেদিনই গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব পল মার্ক হেনরির নিকট ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আয়োজন করে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং সমগ্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সসম্মানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার’ জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান। পল মার্ক হেনরি এই বিষয়টি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দূতাবাসকে অবহিত করার পর প্রস্তাবটি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পাঠান। এই প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল, এমন সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এই প্রস্তাব বাতিল করেছেন। পাকিস্তান আপাতত সেরকম কোনো আবেদন করছে না। অতএব এ বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে যায়।

আসলে প্রস্তাবটি বাতিল করার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ খবরটি জানার পর তারা দ্রুত ইয়াহিয়া খানকে জানায় যে সপ্তম নৌবহর ইতোমধ্যে তাদের সাহায্যের জন্য রওনা হয়েছে, কাজেই পাকিস্তান যেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার না করে। এই কথা শুনেই ইয়াহিয়া জাতিসংঘ থেকে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে নেন। একইদিনে মার্কিন কর্তৃপক্ষও পুনরায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর চাপপ্রয়োগ করে যাতে তারা পূর্ববাংলায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়। তা না হলে সপ্তম নৌবহর দিয়ে আক্রমণের প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার চীনের সাথেও আলোচনা করেন। চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের ভয়ে সরাসরি কিছু না বললেও মৌন সমর্থন দেয়। তাতে কিসিঞ্জার উল্লসিত হয়ে পাকিস্তানকে তা জানান। যদিও রণাঙ্গনে তখন পাকিস্তানের অবস্থা শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হচ্ছে। একের পর এক ঘাঁটির পতন ঘটছে যৌথবাহিনীর হাতে।

সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে তার যাত্রা অব্যাহত রাখে। এই খবরে ভারত তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয় সপ্তম নৌবহর এসে পৌঁছানোর আগেই যতদ্রুত সম্ভব ঢাকা দখলে আনার চেষ্টা করতে। কারণ এই শক্তিশালী নৌবহর যে সহজেই পুরো একটা সেনাবাহিনীকে ধরাশায়ী করতে সক্ষম ছিল, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর তার পাশাপাশি ভারত এবার মৈত্রী চুক্তি অনুসারে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক হস্তক্ষেপ কামনা করে।

পাকিস্তানের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর প্রেরণের বিষয়টি সোভিয়েত ইউনিয়নও মোটেই ভালো চোখে দেখেনি। এই নৌবহর প্রেরণের ফলে একে তো তাদের বন্ধুদেশ ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি হয়েছিল, তার ওপর এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে একচেটিয়া মার্কিনদের আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে ভারতের অনুরোধের সাথে সাথেই সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরের কাছে তাদের চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রেখেছিল। ভারতের বার্তার পর এবার তারা তাদের নৌঘাঁটি ভ্লাদিভস্তক থেকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েকটি জাহাজের আরো একটি বহর প্রেরণ করে। এর লক্ষ্য ছিল মার্কিন সপ্তম নৌবহরের মোকাবিলা করে পূর্ববাংলায় পাকিস্তানের সমর্থনে সামরিক হস্তক্ষেপ করা থেকে তাকে নিবৃত্ত করা। সোভিয়েত এই নৌবহরটির নাম ছিল দশম অপারেটিভ ব্যাটল গ্রুপ। এর কমান্ডার ছিলেন এডমিরাল ভ্লাদিমির ক্রুগলিয়াকভ। নৌবহরটি মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে নিরস্ত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই নৌবহরে ছিল-

– ছয়টি সাবমেরিন (পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত)

– দুটি ব্যাটল ক্রুজার

– দুটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ার

– ছয়টি অক্সিলারী ও সাপোর্ট শীপ

এই বিশাল সোভিয়েত নৌবহরটি মার্কিন নৌবহরের মোকাবিলায় বঙ্গোপসাগরে টহল দিতে থাকে। একইসাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো একটি উদ্যোগ নেয়। পাকিস্তানের আরেক বন্ধুদেশ চীন যে তখন প্রয়োজনে ভারতকে আক্রমণের জন্য সৈন্য প্রস্তুত করছিল সে সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়ন জ্ঞাত ছিল। তাই তাদেরকে চাপে রাখতে সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনের সিংকিয়াং সীমান্তে নিজেদের প্রায় দশলাখ সৈন্য এবং বিপুল পরিমাণে ভারী অস্ত্রশস্ত্র এনে জমা করে৷ তা দেখে চীন ভয়ে পিছিয়ে আসে। ১২ ডিসেম্বর তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের সমর্থনে ভারতে সৈন্য পাঠানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। চীনের এই বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র থমকে যায়। তাদের সপ্তম নৌবহর তখন বঙ্গোপসাগর থেকে ২৪ ঘন্টার দূরত্বের মালাক্কা প্রণালীতে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে দোলাচলে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের নৌবহরকে সেখানেই থেমে আপাতত অপেক্ষা করতে নির্দেশ দেয়।

১২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন (৬০০-৮০০ জন) সৈন্য প্যারাশ্যুট দিয়ে অবতরণ করে। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যম এক ব্রিগেড (পাঁচ হাজার) সৈন্য অবতরণ করানো হয়েছে বলে প্রচার করে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল আরো হ্রাস পায়। তারা পালিয়ে ঢাকায় আসার পথ খুঁজতে শুরু করে। ভারতীয় সৈন্যদের অবতরণস্থলটা ছিল ঢাকার কাছেই। তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে সংক্ষিপ্ত লড়াই শেষে তাদেরকে আত্মসমর্পণ করিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়ে যায়। সাথে থাকে টাঙ্গাইলের স্থানীয় কাদেরিয়া বাহিনীর বিশাল এক দল। ওদিকে পূর্বপাশে নরসিংদী পর্যন্তও তখন যৌথবাহিনীর দখলে। ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। চীনের সমর্থনের আশাও শেষ, মার্কিন সপ্তম নৌবহর মালাক্কা প্রণালীতে থেমে আছে। পাকিস্তানি কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি তখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

পাকিস্তানি সৈন্যদের যেসব ইউনিট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ছিল, তারা সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি সরে যেতে সচেষ্ট হয়। তাদের আশা, দক্ষিণে সমুদ্রপথে মার্কিন সাহায্য আসবে। কিন্তু সপ্তম নৌবহর মালাক্কা প্রণালীতে থমকে আছে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায়। মার্কিনদের নিজেদেরও কিছুটা ঝুঁকি ছিল। তাদের সামনে ওঁত পেতে ছিল সোভিয়েত নৌবহর। এটা তাদেরও অজানা ছিল না। তাই ভেবেচিন্তেই এগোতে হচ্ছিল তাদের।

রণাঙ্গনেও এই দিনে যৌথবাহিনী যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে যায়। সেদিন বিকেলে ভারতীয় ৪ গার্ডস ব্যাটালিয়ন ডেমরা ঘাট থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে এসে উপস্থিত হয়। একইদিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়ন, দুটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট এবং ৫৭ ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের হেডকোয়ার্টার মেঘনা নদী অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। তবে ট্যাংকবহর তখনো মেঘনা অতিক্রম করতে পারেনি। ওদিকে টাঙ্গাইলে যে প্যারাট্রুপাররা অবতরণ করেছিল তারা কাদেরিয়া বাহিনীর সাথে মিলে ঢাকার দিকে রওনা হয় এবং ঢাকা অভিযানের পথ অনেকটাই পরিষ্কার হতে থাকে।

একইসাথে ভারতীয় নৌবাহিনী বেশ গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা কাজ করে। উপকূলের দিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের এগিয়ে আসার খবর তাদের ততক্ষণে অজানা নেই। তাই তারা চালনা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে সবক’টি ছোটবড় জাহাজ ও নৌযান এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর সহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস বা অকেজো করে ফেলে। উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন নৌবহর আসলেও যাতে উপকূলীয় অঞ্চলে কোনোরূপ সহায়ক নৌযান বা সুবিধা না পায়। মার্কিন বহরের জাহাজগুলো আকারে অনেক বড় হওয়ায় তীর পর্যন্ত ভেড়ার সক্ষমতা তাদের ছিল না। তাই জাহাজগুলো থেকে অস্ত্র, রসদ বা সৈন্য নামাতে হলে জাহাজ তীর থেকে অনেক দূরে নোঙর করিয়ে ছোট নৌযানগুলোতে করে এসব তীরে পাঠাতে হতো। এছাড়াও বিমানশক্তির প্রয়োগের জন্য কক্সবাজার বিমানবন্দরও তাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লাটফর্ম হতে পারতো। কিন্তু ভারতীয় নৌবাহিনী ছোট নৌযান এবং বিমানবন্দর উভয়ই অকেজো করতে সক্ষম হয়।

পরদিন ১৩ ডিসেম্বর৷ পশ্চিম পাকিস্তানের হাইকমান্ড থেকে নিয়াজিকে জানানো হয়, তার জন্য যে মার্কিন বা চীনা সাহায্য আসার কথা ছিল, তা আটচল্লিশ ঘন্টার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে নিয়াজি মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন। ঢাকার পথে তখন যৌথবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত। টাঙ্গাইল থেকে কাদেরিয়া বাহিনী এবং ভারতীয় ১০১ কমিউনিকেশন জোন সন্ধ্যায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পৌঁছে যায়। পূর্বদিকে বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর প্রথম ইউনিট হিসেবে এস ফোর্সের ২ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট শীতলক্ষ্যার পাড়ে এসে পৌঁছে। ঢাকাকে চারদিক থেকে তখন যৌথবাহিনী ঘিরে ধরেছে। তবে অবচেতন মনে তখন সবারই একটা ভয় ছিল। সেটা হচ্ছে, ঢাকা যেহেতু পাকিস্তানি বাহিনীর প্রাণকেন্দ্র, তাই ঢাকা তারা এত সহজে ছেড়ে দেবে না। ঢাকা রক্ষায় ১৫-২০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য জমা করার কথাও ভেসে বেড়াচ্ছিল। কাজেই ঢাকা দখলের জন্য কত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হয়, কত বেসামরিক মানুষের প্রাণ যায়, কত স্থাপনা ধ্বংস হয়, এ নিয়ে তখন সবাই উদ্বিগ্ন। যদিও ঢাকার চারপাশে ঘিরে রাখা যৌথবাহিনীর সৈন্যসংখ্যা এবং শক্তিমত্তা দুটোই অনেক বেশি। তাছাড়া শহরের ভেতরও সাধারণ মানুষের প্রায় সবাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সারাদেশেও তখন পাকিস্তানি বাহিনী রীতিমতো পঙ্গু, আর মার্কিন বা চীনা সাহায্যও আসছে না। ওদিকে ঢাকার আকাশে ভারতীয় বিমানের একচ্ছত্র আধিপত্য। এমন অবস্থায় লড়াই করার মনোবল নিয়াজির বাহিনীর মধ্যে অবশিষ্ট ছিল বলে মনে হয় না।

ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ তখন তাই বারবার পাকিস্তানি বাহিনীকে আহবান করছিলেন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের জন্য। একইদিনে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র আবারো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলে যথারীতি সোভিয়েত ভেটোয় তা বাতিল হয়ে যায়। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌবহরকে পুনরায় বঙ্গোপসাগরে ভারত অভিমুখে রওনা হতে আদেশ দেয়। সোভিয়েত নৌবহরও বঙ্গোপসাগরে টহলে থাকে।

১৪ ডিসেম্বর। কেবল ঢাকা আর বড় দুয়েকটা শহর ছাড়া রণাঙ্গনের বাকি সবটা যৌথবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতি এত সঙ্গীন যে যেকোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ঘটতে পারে। অবশ্য তারপরও নিয়াজি হাল ছাড়েননি। তখনো অবধি তার আশা ছিল যে মার্কিনরা আসবে।

সেদিনই দুপুরে ঢাকার গভর্নর হাউজে পাকিস্তানের তাঁবেদার গভর্নর ডাক্তার আবদুল মোতালেব মালেকের নেতৃত্বে সভা চলছিল। খবর পেয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ছয়টি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান দিয়ে সেখানে রকেট ও বোমা হামলা করা হয়। তীব্র শব্দ ও ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভয়ে ডাক্তার মোতালেবের সরকার তৎক্ষনাৎ পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেয়। শেষপর্যন্ত সেদিন বেলা আড়াইটার দিকে গভর্নর মালেক এবং নিয়াজির কাছে ইয়াহিয়া খানের বার্তা এসে পৌঁছায়, যেখানে পাকিস্তানি সৈন্যদের জীবন রক্ষার্থে যুদ্ধ বন্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। পরোক্ষভাবে এতে আত্মসমর্পণের প্রতিই সম্মতি ছিল।

অর্থাৎ তখন আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়াজির কাঁধের ওপরই। তিনি যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবনামা ভারতকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিমান আক্রমণে নিয়াজির যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তিনি প্রস্তাবটি ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাককে দেন এবং ভারতকে তা জানাতে বলেন। কিন্তু মার্কিন কনসাল জেনারেল বার্তাটি দিল্লিতে না পাঠিয়ে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে দেন এবং তার আরো একুশ ঘন্টা পর, পরদিন ১৫ ডিসেম্বরে অবশেষে সেটি এসে দিল্লি পৌঁছে। এই ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণের কারণ ছিল শেষ চেষ্টা করে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করা। তবে নিয়াজির এই বার্তা দেখে মার্কিন কর্তৃপক্ষও হয়তো বুঝতে শুরু করে যে পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি সৈন্যদের তখন সত্যিই ভয়াবহ দুরবস্থা। তাদের সপ্তম নৌবহরও হয়তো তাদেরকে বাঁচাতে সক্ষম হবে না। তারপরও বহরকে তারা বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখতে বলে এই কারণে যে, যুদ্ধ করে পাকিস্তানকে বাঁচানো না যাক, অন্তত পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যদের পালানোর ব্যবস্থা এই নৌবহরের জাহাজগুলোর মাধ্যমেই করা যাবে।

যাই হোক, নিয়াজির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিল্লি পৌঁছালে দেখা যায় সেখানে নানান অস্পষ্টতা আর কূটকৌশলের আভাস। তাই ভারতীয় জেনারেল মানেকশ সেটি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেন। তাঁর এই দাবির যৌক্তিকতাও ছিল প্রশ্নাতীত। কারণ ঢাকা শহরের চারপাশে তখন বাংলাদেশ ও ভারতের সৈন্যরা ঘিরে রেখেছে, সারাদেশও তাদের দখলে, আকাশও ভারতের আয়ত্তে, বিদেশি সাহায্যও আসছে না। আত্মসমর্পণ ছাড়া নিয়াজির আসলেই আর কোনো পথ খোলা ছিল না। এরই মধ্যে তাদের মনোবল আরো দুর্বল করার জন্য সারাদিনব্যাপী ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হতে থাকে। এই অবস্থায় নিয়াজি আত্মসমর্পণের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেন। তবে তিনি পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকাল নয়টা পর্যন্ত বিমান হামলা বন্ধ রাখার আহবান জানান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার এই দাবি মেনে নেয়।

১৫ ডিসেম্বরেই জাতিসংঘে এক নাটকীয় ঘটনা ঘটে৷ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের অনুকূলে পোল্যান্ড যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব তোলার পর পাকিস্তানের প্রতিনিধি জুলফিকার আলী ভূট্টো হাতের কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন এবং হেঁটে বেরিয়ে গিয়ে নাটকীয়তার সৃষ্টি করেন। তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে হয়তো পাকিস্তানি বাহিনী অন্তত চরম লজ্জা থেকে বাঁচতো। কিন্তু তা না করে তার বেরিয়ে যাওয়াটা ছিল রহস্যজনক।

পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে যুদ্ধবিরতি দুপুর তিনটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একইসাথে আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত আলোচনার জন্য একজন প্রতিনিধি পাঠাতে বলেন নিয়াজি। অবশ্য সকালেই ভারতের ১০১ কমিউনিকেশন জোনের সৈন্যরা কাদেরিয়া বাহিনীসহ ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় এবং সেখান থেকে ভারতীয় জেনারেল নাগরা নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের জন্য বার্তা পাঠান। নিয়াজি মৌন সম্মতি দেওয়ার পর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে যৌথবাহিনী সর্বপ্রথম ঢাকায় প্রবেশ করে। দুপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব ঢাকায় এসে আত্মসমর্পণের বিষয়াদি চূড়ান্ত করেন। বিকেল নাগাদ বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীর দুটি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়ন ঢাকায় প্রবেশ করে। এছাড়াও ছিল কয়েক হাজার সশস্ত্র গেরিলা যোদ্ধা।

ওদিকে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর তখনো ছুটছে। এ সময় তাদের সাথে সোভিয়েত নৌবহরের দূর থেকে ‘সাক্ষাৎ’ ঘটে বলে জানা যায়। সোভিয়েত নৌবহরটির কমান্ডার পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে জানান, দূর থেকে মার্কিন বহর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তাঁর বহরের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন ও অন্য যুদ্ধজাহাজগুলো প্রদর্শন করেন। এতে কাজ হয়। মার্কিন নৌবহরের গতি কমে যায় আর সোভিয়েত নৌবহর তাদেরকে বঙ্গোপসাগরের আশপাশে ধাওয়া করতে থাকে। জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা অব্যাহত ছিল। সোভিয়েতরা মার্কিন বহরকে কিছুতেই ভারত বা বাংলাদেশের উপকূলের নিকটবর্তী হতে দেয়নি। ফলে মার্কিনরা শেষ মুহূর্তেও আর পাকিস্তানের পক্ষে কিছু করার সুযোগ পায়নি। সোভিয়েত নৌবহরটির এই অসাধারণ কৃতিত্ব এবং আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ এই আচরণের কথা অবশ্য-স্মরণীয়

এদিকে ঢাকায় অবশেষে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে। রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে আসে। সবাই আনন্দে উদ্বেলিত। তারা ছুটছে, উল্লাস করছে, যৌথবাহিনীর সৈন্যদের সাথে হাত মেলাচ্ছে… নয়মাস পর অবশেষে বিজয়ের দিন তবে এলো!

বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ

বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে দাঁড়িয়ে নয়মাস আগে জাতির জনক স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেখানেই, লাখো বাঙালিকে হত্যার দায় মাথায় নিয়ে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করেন নিয়াজি। ধরা দেয় বিজয়, বাঙালি অবশেষে পায় স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভূখন্ড, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার।

 

লেখাঃ ফেরদৌস ইউসুফ

Facebook Comments

comments