রাশিয়া যখন আফগানিস্থানে বিদ্রোহীদের উপর অভিযান আরম্ভ শুরু করল তখন বিদ্রোহীরা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই পারছিল না ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের আমলের বন্দুক ও মর্টার দিয়ে তাঁরা রুশ আধুনিক ট্যাংক, এপিসি ও হেলিকপ্টারের কোন কিছুই বলতে গেলে করতে পারছিল না। অপরদিকে সীমান্তে ছিল সোভিয়েত গোয়েন্দা কেজিবির কঠোর নজরধারি। রেড আর্মির সামনে পাত্তাই পাচ্ছেনা আফগান মুজাহিদরা। 

বিশেষ করে সবচেয়ে ভয়ানক ছিল সোভিয়েত ট্যাংক ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার এমআই-২৪। 

অ্যাটাক হেলিকপ্টার এমআই-২৪ প্রথম দিকে খুবই কার্যকারী ছিল আফগানিস্থানে। মুজাহিদ বাহিনীর সকল রসদ, ক্যাম্প সবই গানশিপ, রকেট ও মিসাইল মেরে ঘুরিয়ে দিতে লাগল। মুজাহিদদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় রুশ ট্যাংক ও এই এমআই-২৪ হেলিকপ্টার। তখন মার্কিনরাও চিন্তায় পরে যায়। পাকিস্থানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জানিয়ে দেন তিনি আর আফগান রিউফিউজি নিতে পারছেনা। 

যদি আফগান মুজাহিদদের আমেরিকা আসলেই সাহায্য করতে চায় তাহলে তাঁদের ভালমানের অস্ত্র সরবরাহ করুক। এইসব ২য় বিশ্বযুদ্ধ আমলের অস্ত্র দিয়ে রেড আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মানে একধরনের মশকরা। তখন আমেরিকা বিষয়টি অনুধাবন করে ও রুশ হেলি ধ্বংসের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করে আলোচিত স্ট্রিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল। এর রেঞ্জ ছিল ৮ কিলোমিটার। গতি ছিল পার সেকেন্ডে ৬০০ মিটার। 

এই স্ট্রিঙ্গার সারফেস টু এয়ার মিসাইল পরবর্তী সময়ে রুশ হেলির জন্য এক বিভীষিকার নাম হয়ে উঠে। আর রুশ ট্যাংক ও এপিসিকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিম জার্মানী আফগান মুজাহিদের জন্য তাঁদের বিখ্যাত মিলান এন্টি ট্যাংকের মিসাইলের নতুন ভার্সন মিলান – ২ এর ১১৫ ক্যালিবারের মিসাইল বানায় যা কেবল আফগান মুজাহিদদের দেওয়া হতো। কিন্ত এই অস্ত্র গুলি কেজিবির চোখ এড়িয়ে যাওয়া ছিল অনেক কষ্টের বিষয় তাই সিআই ও পাকিস্থানি আইএসআই তাঁরা দুর্গম এলাকা দিয়ে বিশেষ করে ঘোড়া ও গাধার উপর বোঝা করে পাচার করতো যাতে কেজিবি সন্দেহ না করে ! 

স্ট্রিঙ্গার ও মিলান মিসাইল হাতে আসার পরে খেলা শুরু হয় একের পর এক রুশ হেলি, ট্যাংক, এপিসি গুলি আক্রান্ত ও ধ্বংস হতে থাকে। ভয়ানক রেড আর্মির বিশাল এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে যায়। যাদের কিছুদিন আগেও মুড়ির মতন উড়িয়ে দিত তাঁরা সেই দুর্বল মুজাহিদরা এখন হয়ে উঠেছে এক আতঙ্কের নাম।স্ট্রিঙ্গার মিসাইলে সরাসরি শুট হয় প্রায় ৪০০ এর কাছাকাছি হেলি কপ্টার ও মিলানের শিকার হয় ১৬০০ এর বেশী ট্যাংক ও এপিসি যার মাঝে ট্যাংক ছিল ৮০০ এর বেশী। বিভিন্ন মডেলের ট্যাংক ছিল টি-৭২,টি-৮০। 
৫৩৩ টি আর্টিলারি কামান সহ মোট ১২ হাজারের বেশী কার্গো ও ফুয়েল ট্যাংক ধ্বংস করে এক ভয়ানক ক্ষতিতে ফেলে রেড আর্মিকে। 

পরবর্তী সময়ে রেড আর্মি হেলি বাদ দিয়ে বিমান দিয়ে হামলা শুরু করে তাই রুশ বিমান রুখতে আইএসআই ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাহায্য নেয়। মোসাদের রুশ বিমান ধ্বংস করতে হেভি এয়ারক্র্যাফট গান জার্মানী থেকে ও বিমান বিধ্বংসী সোভিয়েত মিসাইল আফগানে ডুকায় ফলে ১৩৬ টি বিভিন্ন মডেলের বিমান ধ্বংস করে দেয় মুজাহিদেরা। আফগান যুদ্ধে ক্ষতির পরিমাণ ছিল আরও অনেক বেশী যার সরাসরি প্রভাব রুশ অর্থনীতিতে গিয়ে পরে। ফলাফল সোভিয়েত ভেঙ্গে যায়। আফগানিস্থানে কার্যত পরাজিত হয় ভয়ংকর রেড আর্মি। 

ছবিতে আলোচিত স্ট্রিঙ্গার মিসাইল নিয়ে এক মুজাহিদিন

Facebook Comments

comments