আমরা বর্তমানকালে তেমন কোন অস্ত্র না বানাতে পারলেও একসময় বিশ্বমানের এবং শক্তিশালী কামান (আর্টিলারি) এই বাংলাদেশের মাটিতেই তৈরী হত। আমাদের দেশের তৈরি কামানগুলি বিদেশে রফতানি হতো। তারই এক জলজ্যান্ত  প্রমাণ এই জাহান কোষা কামান। জাহান কোষা শব্দের অর্থ পৃথিবীর ধ্বংসক

এটি তৈরী করেছিলেন ঢাকার বাঙালি কর্মকার জনার্দ্দন। জাহানকোষা কামানটির দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার এবং ওজন সাত টনের উপরে। এই কামানটি তৈরী করা হয়েছিল অষ্ট ধাতু অর্থাৎ সোনা, রূপা, দস্তা, তামা, জিঙ্ক, টিন, লোহা ও পারদ দিয়ে। যা জনার্দ্দন কর্মকারের ধাতুবিদ্যায় পারদর্শীতার প্রমান। এই কামানটি থেকে একবার গোলা দাগবার জন্য ১৭ কিলো বারুদের দরকার হত। অষ্ট ধাতু দিয়ে তৈরী হবার জন্য আজও কামানটি মরচে বিহীন। এই মডেলের কামান গুলি দিয়ে কয়েক কিলোমিটারের টার্গেটকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যেত।

এটির উপর লেখা লিপি অনুযায়ী জানা যায়, সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে, বাংলার দারোগা মুহম্মদের নির্দেশে ও হর বল্লভ দাসের তত্বাবধানে, তৎকালীন বিখ্যাত অস্ত্র প্রস্ততকারক শ্রী জনার্দন কর্মকার এই কামানটি নির্মাণ করেন।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করবার সময় ওই কামানটি এখানে নিয়ে আসেন। মুর্শিদকুলি খাঁ থেকে পরবর্তী অন্যান্য নবাবগণ এখানে তাদের অস্ত্রাগার বা ‘তোপখানা ’ করেন।

সেসময় জাহান কোষা কামানটিকে, একটি অশ্বথ গাছের শিকড়ে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

পরবর্তীকালে, ভারতীয় প্রত্নত্বাত্তিক বিভাগের উদ্যোগে, এই কামানটিকে গাছের শিকড় থেকে ছাড়িয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এটি বর্তমানে মুর্শিদাবাদের তোপখানা এলাকায় প্রদর্শন করা আছে।

লেখাঃ তামজীদ তুষার
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

Facebook Comments

comments