আগ্নেয়াস্ত্রের জগতে রাইফেল আসলো, পিস্তল আসলো কিন্তু মানুষের মন যেন তবুও ভরছে না। সবাই এমন একটা আগ্নেয়াস্ত্রের কথা ভাবতে লাগলো যেটা কিনা খুব দ্রুত অনেক পরিমানে গুলি করতে সক্ষম।

কিন্তু এই আবিষ্কারের প্রথম বাধা হয়ে দাড়ালো ব্যারেল। দ্রুত গুলি করার ফলে ব্যারেল গরম হয়ে ফেটে বা গলে যেতে লাগলো। এই সমস্যার প্রথম সমাধান করলেন Dr. Richard J. Gatling. এই আমেরিকান ভদ্রলোকই প্রথম মেশিনগান আবিষ্কারক।

মেশিনগানের প্রথম সমস্যা ছিলো ব্যারেল তাই মেশিনগানকে ভাগ করতে হলে ব্যারেল হিসেব করে কয়েকটা ভাগে ভাগ করতে হবেঃ

  • মাল্টিপল ব্যারেল।
  • ওয়াটার কুল ব্যারেল।
  • এয়ার কুল ও রিপ্লেসেবল ব্যারেল।

এখন মেশিনগানের মধ্যে কয়েক রকম প্রকারভেদ আছে। যেমন,

  • হেভি মেশিনগান (HMG)
  • মিডিয়াম মেশিনগান (MMG)
  • জেনারেল পারপাস মেশিনগান (GPMG)
  • লাইট মেশিনগান (LMG)
  • সাব-মেশিনগান (SMG)
  • রোটারি মেশিনগান (RMG or Gatling)

হেভি-মেশিনগানের কাজ হচ্ছে হেভি ফায়ার সাপোর্টের প্রদান করা। মিডিয়াম ও জেনারেল পারপাস মেশিনগান সাধারণত পদাতিক বাহিনীকে কভার দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং লাইট মেশিন গানের কাজটা হচ্ছে আক্রমানাত্বক ভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় (অনেকটা ফুল-অটোতে রাইফেলের মত)। আর সাব-মেশিনগান হচ্ছে ক্লোজ কমব্যাট ও কমান্ডো মিশনের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।

আজকের এই পোস্টে মেশিনগান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, চলুুুন দেখে নেয়া যাকঃ

Gatling Gun:

Gatling Gun

ব্যারেল সমস্যার সমাধান করে ১৮৬২ সালে চিকিৎসক Richard J. Gatling আবিষ্কার করেন প্রথম হস্ত চালিত মেশিনগান। যা দিয়ে মিনিটে ২০০ গুলি করা যায় (তখনকার যুগে এটা ছিলো বিস্ময় )। এই মেশিনগানের নামকরন করা হয় তার নাম থেকে। এটা ছিলো মাল্টিপল ব্যারেল যা হাতের সাহায্যে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গুলি করতে হতো। একটা ব্যারেল গুলি করার পর পরের ব্যারেল এসে গুলি করতো যার কারনে ব্যারেল ঠান্ডা হওয়ার যথেষ্ট সময় পেত পরের গুলি করার জন্য। এর ইফেক্টিভ রেঞ্জ ছিলো ১২০০ গজ। এর ওজন ৭৭ কেজি যা চাকার উপর বসিয়ে চারজন সৈনিকের সাহায্যে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিচালনা করা হতো। আমেরিকান সিভিল ওয়ারে ইউনিয়েন সৈনিকরা কনফেডারেটদের কচুকটা করতো এই মেশিন গান দিয়ে। পরবর্তীতে রাশিয়ান এম্পায়ার, ব্রিটিশ এম্পায়ার, ফ্রান্স, জাপান বহু দেশ এটা ব্যবহার করতো।

 

Maxim Gun:

Maxim Gun

পূর্বের গ্যাটলিং গানের প্রযুক্তি ফেলে সর্বপ্রথম আমেরিকান-ব্রিটিশ আবিষ্কারক Sir Hiram Stevens Maxim ১৮৮৬ সালে আবিষ্কার করলেন প্রথম আধুনিক মেশিনগান যা চালানোর জন্য হাত ঘুরাতে হবে না শুধু ট্রিগারে চাপ দিলেই হবে। টেকনিক্যালি Sir Hiram Stevens Maxim হচ্ছেন প্রকৃত মেশিনগানের আবিষ্ককারক। ম্যাক্সিম গান হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ওয়াটার কুল আধুনিক মেশিনগান যা মিনিটে ৫৫০-৬০০ রাউন্ড গুলি করতে সক্ষম। ব্যারেল যেন অতিরিক্ত তাপে গলে না যায় তার জন্য ব্যারেলের চারপাশে পানি থাকবে আর পানির তাপমাত্রায় ব্যারেল ঠান্ডা থাকবে। ব্যারেলের তাপে পানি গরম হয়ে গেলে পানি পাইপ দিয়ে বের হয়ে যাবে আর অন্যদিক দিয়ে পানি দিতে হবে।

এই মেশিনগানের জন্ম হচ্ছে গ্রেট-ব্রিটেনে আর এই মেশিনগান আবিষ্কারের সাথে সাথে পৃথিবীর তৎকালিন সকল পরাশক্তি এর প্রযুক্তি কিনে নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এর ভয়াবহতা দেখা দেয় কারন সকল বাহিনীর কাছেই এই মেশিনগানটা ছিলো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এমনকি বিমান বাহিনীর বিমানেও এই মেশিনগান লাগানো ছিলো। এর ওজন ২৭ কেজি, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২৯৫০ গজ, ক্যালিবার ৩০৩ বেল্ট। ১৮৮৬ সালে আবিষ্কারের পর কোরিয়ান যুদ্ধ পর্যন্ত সকল যুদ্ধে সফলতার সাথে ব্যবহার হয়। এই মেশিনগান নিজে এক লেজেন্ড এবং ব্রিটিশদের গর্ব।

Chauchat Machine Gun

ওয়াটারকুল ব্যারেল অনেক হেভি ও ঝামেলার কারনে চলে আসলো এয়ার-কুল ব্যারেল (বর্তমানে সব মেশিনগান গুলেই এয়ার কুল) যা বাতাসে ঠান্ডা হয়। এয়ার-কুল প্রথম মেশিনগান কোনটা আমার সঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত ফ্রান্সের Chauchat Machine Gun হতে পারে।

 

M1918 BAR:

BAR LMG

BAR হচ্ছে প্রথম সফল লাইট মেশিনগান (LMG)। BAR মানে হচ্ছে Browning Automatic Rifle। ১৯১৮ সালে এই রাইফেল সাভির্সে আসে যার ডিজাইনার ছিলেন আমেরিকান লেজেন্ডারী অস্ত্র নির্মাতা John Browning। এর ওজন ৭ কেজির মত, ক্যালিবার বিভিন্ন (৩০৩, ৭.৬২), রেট অফ ফায়ার ৫৫০-৬৫০ রাউন্ড পার মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১৫০০ গজ। ২য় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধে সফলভাবে ব্যবহার হয়। প্রায় ৫০+ দেশ এই লাইট মেশিনগান ব্যবহার করতো।

 

M1919 Browning Machine Gun:

M 1919 Browning

এই মিডিয়াম মেশিনগানের ডিজাইনারও John Browning। ১৯১৯ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে এবং এখনো অনেক দেশে এই মেশিনগান সার্ভিসে রয়েছে। এর ওজন ১৪ কেজির মত , রেট অফ ফায়ার ৬০০ রাউন্ড , কার্তুজ ৭.৬২ মিলি, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১৫০০ গজ। এই এয়ার কুল মেশিনগান গুলো ফায়ার করার নিয়ম হচ্ছে থেমে থেমে ফায়ার করা তাহলে ব্যারেল সহজে গরম হবে না। ২য় বিশ্বযুদ্ধ ও কোরিয়ান যুদ্ধের সময় আমেরিকান প্যারাট্রুপারদের প্রিয় মেশিনগান ছিলো এই এম-১৯১৯।

 

Bren Gun:

Bren Gun

ডিজাইন, সার্ভিস ও যুদ্ধ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে “This is the Best Air Cool Light Machine Gun in the World”। ১৯৩৮ সালে এটি ব্রিটিশ মিলিটারীতে সার্ভিসে আসে। এর ডিজাইনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে ব্যারেল রিপ্লেস করা যায় আর এই আইডিয়াই পরবর্তী সকল এয়ার কুল মেশিনগানে ব্যবহার করা হয়।

এর ওজন হচ্ছে ৮-১০ কেজির মধ্যে, ক্যালিবার .৩০৩ ও ৭.৬২ মিলি, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ৬০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৫২০ প্রতি মিনিটে। ৬০ এর অধিক দেশে এই রাইফেল ব্যবহার করা হয়, ব্রিটিশরা চলে গেলে ব্রিটিশদের কলকাতার কারখানায় ভারতীয়রা এই মেশিনগান বানায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভারত-চায়না যুদ্ধ, পাক-ভারত যুদ্ধ, ফকল্যান্ডে যুদ্ধে এটা ব্যবহার করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এই মেশিনগান ব্যবহার করে।

 

Maschinengewehr-42 or Mg-42:

 Mg-42

Mg-42

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক জেনারেল পারপাস মেশিনগান হচ্ছে Mg-42। ১৯৪২ সালে নাৎসি জার্মানী সার্ভিসে আনে এই মেশিনগানকে। Mg-42 হচ্ছে Mg-34 এর আপডেট ভার্সন।

এমজি-৪২ এর ব্যারেল হচ্ছে এয়ার-কুল রিপ্লেসেবল ব্যারেল (ব্যারেল গরম হয়ে গেলে খুলে আরেক ব্যারেল লাগানো যায়)। এর ওজন হচ্ছে সাড়ে ১১ কেজি, ইফিক্টেভ রেঞ্জ ২১০০ গজ, ক্যালিবার ৭.৯২ রাউন্ড বেল্ট। এর রেট অফ ফায়ার মিনিটে ১২০০ রাউন্ড যা একে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক মেশিনগান করে তুলে। বাঙ্কার কিংবা পিল বক্সে বসে এমজি-৪২ হবে সবচেয়ে ভয়ানক ডিফেন্সিভ মেশিনগান।

নাৎসিরা এই মেশিনগান দিয়ে ব্রিটিশ, রাশিয়ান, আমেরিকানদের কুচু কাটা করতো। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা গেছে বাঙ্কারে বসে একাই এই মেশিনগান চালিয়ে ১০০-১৫০ সৈনিক হত্যা করে ফেলেছে নাৎসি সৈনিকরা। আমেরিকান সৈনিকদের এই মেশিনগানের আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্য স্পেশাল ট্রেনিং দেয়ানো হতো। আমেরিকান সৈনিকরা এর ভয়াবহতার জন্য নাম দিয়েছিলো “Hitler’s Buzz Saw” আর ব্রিটিশ সৈনিকরা নাম দিয়েছিলো “Spandau”। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর Mg-3 হচ্ছে এর আপডেট ভার্সন। এই মেশিনগান এখনো ৪৫+ দেশে ব্যবহার হচ্ছে।

 

RPD Machine Gun:

RPD

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৫ সালে এই লাইট মেশিনগান সার্ভিসে আনে। সার্ভিসে আসার পর থেকেই এই মেশিনগান জনপ্রিয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় সকল যুদ্ধেই এই মেশিন গান ব্যবহার হয়। এর ওজন ৭ কেজির মত, ক্যালিবার ৭.৬২ ড্রাম বেল্ট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১১০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৬৫০-৭৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ৫০টা দেশে এই মেশিনগান সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।

RPD Machine Gun

ছবিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে আরপিডি মেশিনগান

 

M-60 Machine Gun:

M-60

আমেরিকানরা ১৯৫৭ সালে এই জেনারেল পারপাস মেশিনগান সার্ভিসে আনে। এই মেশিন গান মূলত জার্মান FG-42 এর কপি আপডেট ভার্সন। আমেরিকান সৈনিকরা এই মেশিনগান কাদায় অকেজো হয়ে যাওয়ার জন্য এর নাম দেয় – “The Pig”।

এই মেশিনগান এয়ার কুল রিপ্লেসেবল ব্যারেল। এর ওজন হচ্ছে ১০ কেজি, ক্যালিবার ৭.৬২ বেল্ট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১২০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৬০০-৬৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। এর একুরিসি ও রিলাইবেলিটির জন্য বিশ্বের প্রায় ৫০টা দেশ এই মেশিনগান ব্যবহার করে। ফাস্ট ব্লাড সিনেমায় জন র‌্যাম্বোর হাতে এই মেশিনগানটা দেখতে পাবেন।

 

Kalashnikov PK Machine Gun:

PKM

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সুন্দরীকে ১৯৬১ সালে সার্ভিসে আনে। পিকিএম হচ্ছে এয়ারকুল রিপ্লেসেবল ব্যারেল জেনারেল পারপাস মেশিনগান। এর ডিজাইনার লেজেন্ডারী অস্ত্রনির্মাতা Mikhail Kalashnikov

Mikhail Kalashnikov

ছবিতে মিখাইল কালাশনিকভ

এর ওজন ৯ কেজি, ক্যালিবার ৭.৬২ বেল্ট বক্স, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১১০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৬০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। বাংলাদেশ এর লাইন্সে ভার্সন বানায় যা বিডি-১৪ নামে পরিচিত ।

এর সফলতার জন্য বিশ্বের প্রায় ৯৮+ দেশ এই মেশিনগান ব্যবহার করে।

 

FN Minimi or M-249:

M 249

বেলজিয়াম ১৯৭৪ সালে এই লাইট মেশিনগানকে সার্ভিসে আনে। পরবর্তীতে এর প্রযুক্তি আমেরিকানরা কিনে এর নাম দেয় এম-২৪৯। এর ওজন ৬ কেজির চেয়ে একটু বেশি, ক্যালিবার ৫.৫৬ ন্যাটো বেল্টবক্স, রেট অফ ফায়ার ৮০০-১১০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। এর ব্যারেল এয়ার কুল রিপ্লেসেবল। বাংলাদেশ সহ বিশ্বে প্রায় ৫০টা দেশে এই মেশিনগান ব্যবহার হয়।

 

FN Mag or M-240:

FN Mag

বেলজিয়াম এই মাস্টারপিসকে ১৯৫৮ সালে সার্ভিসে আনে। এফএন ম্যাগ হচ্ছে এয়ার কুল রিপ্লেসবল ব্যারেল জেনারেল পারপাস মেশিনগান। আমেরিকানরা এর প্রযুক্তি কিনে নিয়ে বানায় এম-২৪০

M 240

এর ওজন ১১ কেজি, ক্যালিবার ৭.৬২ মিমি বেল্ট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ৯০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৮০০-১০০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। ব্রিটিশ আর্মির স্ট্যান্ডার্ট মেশিনগান হচ্ছে এই এফএন ম্যাগ। এর সফলতার জন্য বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ৮৫টা দেশ এই মেশিনগান সার্ভিসে রেখেছে।

 

M-134 or Mini Gun:

Rotating Gatling গান যে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়নি তার বড় প্রমান হচ্ছে মিনি গান। ১৯৬১ সালে গেটলিং গানের প্রায় একশো বছর পর এই মেশিন গান সার্ভিসে আসে। এই মেশিনগান চালাতে ইলেকট্রিক মটোরের প্রয়োজন হয়। গাড়ি, বিমান, হেলিকপ্টার, জাহাজে বসানো থাকে এই মিনি গান। ওজন ৩৯ কেজি, ক্যালিবার ৭.৬২ বেল্ট, রেঞ্জ ১১০০ গজ, রেট অফ ফায়ার প্রায় তিন হাজার থেকে ছয় হাজার রাউন্ড প্রতি মিনিটে।

 

DShK Machine Gun:

DSHk

সোভিয়েতরা ১৯৩৮ সালে এই হেভি মেশিন (HMG) গান সার্ভিসে আনে। ট্যাংক, জাহাজ, এপিসি, এএফভি, হেলিকপ্টারে এই মেশিনগান বসানো থাকে। এর ওজন ৩৪ কেজি, ক্যালিভার ১২.৭ বেল্ট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২ হাজার গজ, রেট অফ ফায়ার ৬০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পরবর্তী সকল যুদ্ধে এই মেশিন গান ব্যবহার হয়। হেভি ফায়ার সাপোর্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সহ প্রায় ৮৫ টা দেশ এই মেশিন গান ব্যবহার করে।

 

M-2 Browning:

১৯২১ সালে আমেরিকান আইকনিক ডিজাইনার জন ব্রাউনিং এই হেভি-মেশিনগানকে (HMG) পৃথিবীর মুখ দেখান। ১৯৩৩ সালে আমেরিকান মিলিটারী সার্ভিসে আনে এই মেশিনগানকে। আমেরিকান মিলিটারী ইতিহাসে লং সার্ভিস রেকর্ড ওয়েপন হচ্ছে এই এম-২ ব্রাউনিং মেশিনগানের। মেশিনগান জগতের লেজেন্ড হচ্ছে এই এম-২ ব্রাউনিং মেশিন গান। আমেরিকান সৈনিকরা এর নাম দেয় “Ma Deuce” মানে শয়তানের মা বা মাদার অফঅল মেশিনগান।

এই মেশিনগানে ফুল-অটো ফায়ারের সাথে সিঙ্গেল ফায়ারও করা যায়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কার্লোস হেথকক নামে এক সৈনিক এই মেশিনগানকে স্নাইপার হিসেবে ব্যাবহার করে রেকর্ড গড়ে তুলেন। এই মেশিনগানের ব্যারেল হচ্ছে এয়ার কুল রিপ্লেসেবল ব্যারেল। ওজন ৩৮ কেজি, কার্তুজ .৫০ ক্যালিভার, রেঞ্জ ৪.৫ মাইল, রেট অফ ফায়ার ৬০০-৮০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে। ট্যাংক, এএফভি, এপিসি, হাম্বি, হাফট্রাক, হেলিকপ্টার, বিমান, যুদ্ধ জাহাজে বসানো থাকে এই মেশিনগানটা। এমনকি বর্তমানে আমেরিকান আনমেন্ড ভিহকেলগুলাতেও এই মেশিনগান বসানো থাকে। বাংলাদেশ এই মেশিনগানের কোরিয়ান ও তার্কিশ ভার্সন ব্যবহার করে। এই মেশিন গান এখন পর্যন্ত ৩ মিলিয়নের উপর বানানো হইছে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ১১০+ দেশ এই হেভি-মেশিনগান তাদের মিলিটারী সার্ভিসে রেখেছে।

 

মেশিনগান বানানোর প্রথম সমস্যা ছিলো “ব্যারেল” এবং এখনো মেশিনগানের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যারেল। একটানা ফায়ার করলে ব্যারেল গলে যাবে বা ফেটে যাবে এর জন্য মেশিনগান থেমে থেমে ফায়ার করার নিয়ম।

পৃথিবীতে এখনো এমন কোন মেশিনগান বানানো সম্ভব হয়নি যেটা টানা ফায়ারের ফলে ব্যারেল গরম হবে না। আমি চেষ্টা করেছি পৃথিবীর সেরা মেশিনগান গুলো সম্পর্কে বর্ননা করতে তবে লেখা বড় হয়ে যাওয়ার কারনে অনেকগুলোর নামই বলতে পারেনি। যেমন: NSV, KPV, Dp-28, M61 vulcan, Type-92, M1895 ইত্যাদি।

মেশিনগান নিয়ে আলোচনা আজ এখানেই শেষ। পরবর্তীতে সাব-মেশিনগান নিয়ে আলোচনা করবো।

Facebook Comments

comments