আজ ব্যালিস্টিক মিসাইল ও আইসিবিএম নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি এই ২টি নিয়ে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কি ?
ব্যালেস্টিক শব্দের অর্থ হলো অভিক্ষিপ্ত বস্তুর আবক্র পথে চলার গতিবিষয়ক বিজ্ঞান।
ব্যালেস্টিক মিসাইল হলো সেইসব মিসাইল যা ব্যবহার করে গোটা একটি অঞ্চল ড্রেস্ট্রয় করা যায়। এগুলো দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নিজ টার্গেটে আঘাত হানে। এমনকি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল থেকেও বেশি উচ্চতায় উঠে আঘাত হানতে সক্ষম ব্যালেস্টিক মিসাইল।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গুলি সাধারণত পরমাণু, রাসায়নিক, জীবাণু বা প্রচলিত উচ্চ বিস্ফোরক নিয়ে টার্গেটে আঘাত হানে।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবনঃ
প্রথম ইতিহাস ঘেঁটে যতটুকু জানা যায় চীনে জন্ম হয় মিসাইলের। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় এবং যুদ্ধে সরাসরি মিসাইল ব্যবহার করেন টিপু সুলতান। ১৮০৫ সালের দিকে ভারতের মহীশুরের টিপু সুলতানকেই আধুনিক মিসাইলের জনক বলা হয়ে থাকে। মহিশুরের রকেট গুলি ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আঘাত হানতে পারতো।
আধুনিক যুগের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম উদ্ভাবন করে নাৎসি জার্মানি। ওয়ানার ভন ব্রাউনের পরিচালনায় ১৯৩০-এর দশকে এটি উদ্ভাবিত হয় এবং সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় ১৯৪০-এর দশকের প্রথমদিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে । তখন এটি ভি-২ রকেট নামেই অধিক পরিচিত ছিল।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ঐ প্রযুক্তির হাত করে নেয় এবং আরও অনেক উন্নত করে । ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থল থেকে, চলমান প্ল্যাটফর্ম, ট্রেন, ট্রাক, সাবমেরিন, যুদ্ধ জাহাজ এমনকি উড়োজাহাজ থেকেও ছোড়া যেতে পারে।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিভিন্ন পাল্লার হতে পারে।
১) স্বল্প পাল্লা
২) মাঝারি ও
৩) দূরপাল্লার
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবনে অনেক দূর এগিয়ে যায়। ১৯৫৭ সালের ১১ জুন আমেরিকার প্রথম আইসিবিএম এটলাস-এ এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে।
আর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম আইসিবিএম আর-৭ এর সফল উৎক্ষেপণ করে ১৯৫৭ সালের আগস্ট মাসে।
কিভাবে কাজ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রঃ
আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো দূরপাল্লার। ঘণ্টায় এগুলোর গতি হতে পারে ১৫ হাজার কিলোমিটার বা আরও বেশি। ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিন্ত উড়ে যায় না এগুলো উপরে উঠে তারপর নেমে আসে। উপরে ওঠার জন্য এগুলোকে জ্বালানি পুড়িয়ে বেগ দিতে হয়।
একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে যাওয়ার পরে আর বেগ লাগে যা-আপন বেগেই চলতে পারে। যখন ছোড়া হয় তখন ক্ষেপণাস্ত্র চলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে। এ ভাবে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করার পর তা নেমে আসে পৃথিবীর দিকে। প্রথমে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে কোনাকুনি ঊর্ধ্বগতি, তার পর মাধ্যাকর্ষণ-নির্ভর দীর্ঘপথ, অবশেষে ফের বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে লক্ষ্যস্থানে অবতরণ মোট পথের এই তিন ভাগ থাকে ব্যালেস্টিক মিসাইল-এর।
আজ বিশ্বের ৩০টিরও মতো দেশের হাতে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তবে আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তথা আইসিবিএম ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের হাতেই রয়েছে।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র টার্গেটে আঘাত হানার আগেই সেগুলো ধ্বংসের ধারণার জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ভি-১, ভি-২ কর্মসূচী চালু করার সময় থেকে। সেইগুলি হল এন্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল বা সংক্ষেপে এবিএম। পরবর্তী সময় এবিএম নিয়ে আলোচনা করবো।
ছবিতে আলোচিত সোভিয়েত আমলের স্কাড মিসাইল এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা শর্ট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.