ইরানের ড্রোন প্রযুক্তির হাতেখড়ি হয় ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইরান এমন কিছু একটা চেয়েছিল যা ব্যবহার করে ইরাকি সেনাদের অবস্থান সমন্ধে জানতে পারবে নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থান করেই। তাই যেমন কথা তেমন কাজ; ১৯৮১ সালের শেষের দিকে ইরানের গাডস এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ৪ টি ইউএভি’র প্রোটোটাইপ তৈরী করে এবং ইরান একটিকে সার্ভিসে পাঠায় যার নাম দেয় মোহাজের-১। এটি (যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত) ইরাকি সেনাদের অবস্থান সহ গুরুত্বপূর্ণ ছবি ইরানের হাতে পৌছিয়ে দেয়।

এটি প্রথম অবস্থায় সফল হলে এতে ০৬ টি আরপিজি-৭ রকেট ইন্সটল করে দেয় যাতে এটি টার্গেট গুলো ধ্বস করতে পারে। এই রকেট লাগিয়ে ইরান একে UAV থেকে UCAV এ রূপান্তর করে। এবং এই মোহাজের-১ UCAV টি বিশ্বের প্রথম ইউসিএভি যেটি’ই প্রথম কোনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে।

মোহাজের-১ এর সফলতায় ইরানীয়ান আর্মড ফোর্স এর থেকেও ভালো কিছু তাদের বহরে চাইলে, তখন গাডস মোহাজের-১ এর নতুন ভাবে ডিজাইন করে কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে এয়ারফ্রেম বানিয়ে অটো-পাইলট প্রযুক্তি যুক্ত করে নাম দেয় মোহাজের-২। এটির প্রোডাকশন লাইন ২০১১ সাল পর্যন্ত খোলা ছিলো এবং তারা ২০০+ এই মোহাজের-২ তৈরি করে। এর কিছুদিন পর ইরান মোহাজের-২ এর নতুনভাবে ডিজাইন করে এর আপগ্রেডেশন কমপ্লিট করে এবং নাম দেয় মোহাজের-৩ যেটি হুদহুদ নামেও পরিচিত।

পরবর্তীতে ইরানীয়ান সেনাবাহিনী এবং আইআরজিসি মিলে নতুন করে ডিজাইন করে তৈরি করে মোহাজের-৪। এবং এর রেঞ্জ, এন্ডুরেন্স ও অন্যান্য সক্ষমতা যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি করে ও হাই ডেফিনিশন ক্যামেরা ইন্সটল করে। এটি হুদহুদ-৪/১০০ বা শাহীন নামেও পরিচিত।
পরবর্তীতে ইরান এর লেটেস্ট ভার্সন মোহাজের-৬ সার্ভিসে নিয়ে আসে।

 

ব্যবহারঃ
২০০৪ সালের ৭’ই নভেম্বর হিজবুল্লাহ একটি মোহাজের-৪ ড্রোনকে ইজরাইলের আকাশ সিমায় পাঠায় এবং এটি প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে ইজরাইলের ২২০+ কি.মি. ভিতরে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ ছবি পাঠায়। এবং টেকনিক্যাল ত্রুটিজনিত কারনে এটি নাহারিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে হিজবুল্লাহ প্রায় ৮+ মোহাজের-৪ ব্যাবহার করে। সেইসাথে ভেনিজুয়েলা ২৮ মিলিয়ন ডলারে অজানা সংখ্যক মোহাজের-২ সংগ্রহ করে। তাছাড়া এটি আফগান সিভিল অয়্যারে ব্যবহৃত হয়েছে।

 

একটি মোহাজের-২ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

দৈর্ঘ্যঃ ২.৯১ মিটার
উইংস্প্যানঃ ৩.৮২ মিটার
সর্বোচ্চ পে-লোডঃ ১৯৮ পাউন্ড
পাওয়ার প্লান্টঃ ১ টি ১৯ কিলোওয়াটের দুই স্ট্রোকের WAE-342 ইঞ্জিন
রেঞ্জঃ ১৫০ কিলোমিটার
এন্ডুরেন্সঃ সাধারণত ৬ ঘন্টা
সার্ভিস সিলিংঃ প্রায় ১১০০০ ফিট

Mohajer-6

ছবিতে মোহাজের-৬

ড্রোন প্রযুক্তিতে ইরানের সাফল্য ইজরায়েল বা আমেরিকার কাছাকাছি না হলেও ইরানের অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। চীনের সহায়তায় আমেরিকার RQ-170 ড্রোনের কপি ও রাশিয়ার সাথে ড্রোন টেকনোলজি আদানপ্রদানের মাধ্যমে ইরান সামরিক ড্রোন নির্মানের রেসে এগিয়ে যাচ্ছে।

Facebook Comments

comments