ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন সেই বোম্বারটি যেটি ব্যবহার করে জাপানের হিরোশিমায় পারমানবিক হামলা চালানো হয়েছিল। আর এই বোম্বারটির নাম হলো Enola Gay (Boeing B-29 Superfortress Enola Gay)। আর ছবিতে যে পাইলটকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হচ্ছেন পল টিবেটস্, যিনি ইতিহাসে সর্বপ্রথম পারমানবিক বোমা হামলাটি করেছেন।

সালটা ছিলো ১৯৪৫।  ইউরোপে তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ, কিন্তু জাপান তার বাহুবলে এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর আমেরিকা তখন জাপানকে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান  জানিয়েছিলো।

একবার নয় আমেরিকা জাপানকে বেশ কয়েকবারই যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান করেছিলো, কিন্তু জাপান তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো।

আর তখন আমেরিকা সিদ্ধান্ত নেয় যে যেকোনো মূল্যে এই যুদ্ধ থামাতে হবে। যেহেতু সোজা কথায় কাজ হয়না সেহেতু আমেরিকা ঠিক করলো যে আঙুল এবার বাঁকাতে হবে, মানে পারমানবিক হামলা চালিয়ে জাপানকে চরম শিক্ষা দেওয়া।

আর তাই সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ৬ ই আগস্ট,  আমেরিকা জাপানের হিরোশিমায় (জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮ টায়) লিটল বয় নামে ১৫ কিলোটন TNT শক্তিসম্পন্ন বোমা নিক্ষেপ করে।

ছবিতে লিটল বয় বোমা

আর তারই ৩দিন পর, অর্থাৎ ৯ ই আগস্ট জাপানের নাগাসাকিতে Bockscar (Boeing B-29 Superfortress Bockscar) বিমান হতে ফ্যাটম্যান নামক ২১ কিলোটন TNT শক্তিসম্পন্ন আরেকটি পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। আর এই বোমাটি ফেলেন চার্লস সোয়েনি।

দুটি পারমাণবিক বোমা হামলায় সবমিলিয়ে মারা যায় অন্ততপক্ষে ৮ লাখের ও বেশি মানুষ।

ছবিতে ফ্যাটম্যান বোমা

ছবিতে বকস্কার বিমান

 

লিটল বয় বোমা বহনকারী বিমানের পাইলট বলেছিলো, “যখন আমাকে বলা হয়েছিল যে তোমাকে প্রথম পারমানবিক হামলা চালতে হবে এবং সেই বোমার ক্ষমতা হবে ১৫ হাজার টিএনটি (যেটা কিনা একজন মানুষের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়)।

তখন এটা শুনার পর আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেলাম ১ মাস আমি পাগলের মত হয়ে গেয়েছিলাম কিন্তু তারপরেও আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুুত করা হয়েছিল। তারপর আসলো ৬ আগস্ট, আজ আমাকে প্রথম হামলা চালাতে হবে। আর তাই আমি বোমারু বিমানটি নিয়ে হিরোশিমা শহরের উপরে গেলাম। আর সেই সময় আমি আসলে তেমনকিছু ভাবতে পারছিলাম না।

যাই হোক বোমাটি যখন হিরোশিমা শহরের উপর ফেললাম আমি তখন ৩/৪ সেকেন্ডের জন্য নিচে তাকালাম আর দেখলাম, যে শহরে একটু আগেই ছিল সুন্দর সকাল আর তা এখন আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে আমি তখন কোনো কথা বলতে পারিনি শুধু কয়েক সেকেন্ড সেই ধোয়ার কুন্ডলির দিকে তাকিয়ে ফেরত চলে আসলাম।

পারমানবিক বোমা ফেলার পর দৃশ্য

এখন আসি, সত্যিই কি এই হামলা চালানোর প্রয়োজন ছিল??

অনেকে বিশ্লেষকরাই বলেছেন হামলা চালানোই দরকার ছিল, কারন তা না হলে জাপান কিছুতেই যুদ্ধ থামাতোনা।আবার কেও মনে করেন পারমানবিক হামলা না চালিয়ে যদি আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো তাহলে এর চাইতেও বেশি মানুষ মারা যেত।

বোমা হামলার আগে হিরোশিমা শহরের দৃশ্য

বোমা হামলার আগে হিরোশিমা শহরের দৃশ্য

বোমা হামলার পর হিরোশিমা শহরের দৃশ্য

বোমা হামলার পর হিরোশিমা শহরের দৃশ্য

বোমা হামলার পর নিহত ও আহত মানুষের অবস্থা

বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়াদের একাংশ

বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া এই শিশুটির অবস্থা

Facebook Comments

comments