ম পর্বের পর…

ঘাতক বাহিনীর তৃতীয় দলটি আক্রমণের প্রস্ততি নিয়ে এগোচ্ছিলো ওৎ পেতে। মূলত তারা ২৭৭৮ নং সীমান্ত পিলারের নিকট সুবেদার হারুনের নেতৃত্বে থাকা ৮ সদস্যের একটি দলের ওপর হামলা চালাবে। মেজর লিয়াং চো এই মিশনের মাস্টারমাইন্ড অফিসারদের কাছ থেকে একটি ম্যাপ পেয়েছে। আর সেই ম্যাপ অনুযায়ী খুব দ্রুত গতিতে একের পর এক বিজিবি পোস্টে হামলা চালিয়ে সফল হচ্ছে মেজর লিয়াংয়ের ঘাতক বাহিনী। এই ম্যাপটি মূলত রোহিঙ্গাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বর্মী গুপ্তচরদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অফিসারদের বানানো ডিজিটাল ম্যাপ। এতে নিখুত আক্রমণের জন্য প্রায় সব নির্দেশনাই দেয়া আছে।

সুবেদার হারুনের অধিন সৈনিকরা সবে মাত্র ডিউটি পোস্টে এসেছে। ওদিকে ঘুমন্ত বিজিবি অফিসাররা নায়েক সানোয়ারের চিৎকারে দ্রুত বিল্ডিং এর নিচতলায় চলে এলো। অফিসারদের মধ্যে মেজর মুনতাসির ছিলেন তুলনামূলক সিনিয়র। তিনি সব শুনলেন নায়েক সানোয়ারের কাছ থেকে। অস্বাভাবিক কিছু আচঁ করতে পেরে মেজর মুনতাসির দ্রুত ওয়ারলেস যোগে সব পোস্টকে জরুরী সতর্ক বার্তা পাঠাতে নির্দেশ দেন। ব্যাটালিয়ন সিও ঢাকায় ছিলেন জরুরী কাজে। তাই এই ব্যাটালিয়নের বর্তমান ইনচার্জ মেজর মুনতাসিরই।

হঠাৎ সুবেদার হারুণের ওয়ারলেস বেজে উঠলো। সদর থেকে পাঠানো বার্তা ঠিকভাবে বুঝে ওঠার আগেই শুরু হলো বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ! মূহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সুবেদার হারুণের টহল টিমের দুজন সৈনিক। সুবেদার হারুন দ্রুত মাটিতে শুয়ে আর (R=আত্মরক্ষামূলক) পজিশন নিলেন। বাকী সদস্যরাও একই পন্থা অবলম্বন করলো। কারণ এই গভীর অন্ধকার রাতে শত্রু কে কোথায় পজিশন নিয়ে বসে ফায়ার করছে তা বোঝা দুরুহ ব্যাপার। তাছাড়া ফায়ারের ধরন দেখেই বিজিবি সদস্যরা বুঝতে পেরেছিলো শত্রুরা পরিকল্পিত হামলা করেছে এবং তাদের আছে তূলনামুলক ওয়েল ইকুইপমেন্ট। তাই এই মূহুর্তে এবড়ো থেবড়ো পাল্টা হামলার কোন সুযোগ নেই আত্মরক্ষা ছাড়া।

ওদিকে মেজর লিয়াং চো ওয়্যারলেস মারফত জানতে পারলেন তার তিন নম্বর দলটি যথাযথ আক্রমনে ব্যার্থ হয়েছে। সে রেগে গেলো এবং আরো একটি টিমকে তৃতীয় টিমকে আক্রমণে সহযোগীতার জন্য পাঠালো। সুবেদার হারুন আত্মরক্ষামূলক ফায়ারিংয়ের আশ্রয় নিলো। থেমে থেমে ফায়ারিং চালিয়ে যাচ্ছিলো তার টিম।কিন্ত মেজর লিয়াং এই দলটির ওপর মর্টার চার্জ করলেন এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন আরো ৩ সিপাহী।

সদর থেকে সতর্কবার্তা পেয়ে অন্য সব পোস্টের সদস্যরা আক্রমনাত্মক পজিশন নিলো। সব পোস্টের সৈনিকেরা স্ব-স্ব রাইফেলের চেম্বার পয়েন্টে গুলি রাখলো। মেজর মুনতাসির ৩ মিনিটের মধ্যে ব্যাটালিয়নের সব সদস্যদের সশস্ত্র ফল-ইন এর জন্য ডাকলেন। হ্যান্ড মাইকে তার এই ঘোষণায় ব্যারাকে ঘুমন্ত বিজিবি সৈনিক ও অফিসাররা যে যার মতো পারলো অস্ত্রসমেত তৈরি হয়ে ফল-ইন লাইনে দাড়ালো। ঘড়ির কাটায় রাত তখন ২ টা বেজে ৪৩ মিনিট। এই মধ্যরাতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই সদর দপ্তরটি। মেজর মুনতাসিরের নির্দেশে ওয়ারলেস মারফত খবর ছড়িয়ে দেয়া হলো সকল ছোটবড় বেসক্যাম্পেও। সেখানকার অফিসাররাও সবাই সবার ফোর্সকে তৈরি করলো।

মেজর লিয়াং চো তার চতুর্থ লক্ষ্যে আক্রমণের হুুুুকুম দিলেন। অপ্রতাশিতভাবে তৃতীয় পোস্টে হামলার আগেই সতর্ক হয়ে গেছিলো বিজিবি সদস্যরা এতে মেজর লিয়াংয়ের পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে বেশী সময় খরচ হয়ে গেছে। কিন্ত মেজর লিয়াং ঘুনাক্ষরেও এটা বুঝতে পারেননি যে বিজিবি সদরে তাদের গুপ্ত আক্রমণের খবর পৌছে গেছে। সুবেদার হারুনের টিমের ওপর মর্টার শেল চার্জ করা হয়েছিলো। সেই মর্টার বিস্ফোরনের শব্দ শুনে আরো বেশী সতর্ক হয়ে গিয়েছিলো অন্য পোস্টের সদস্যরা। তারা বেস ক্যাম্প থেকে দ্রুত অতিরিক্ত ফোর্স চাইলো। বেস ক্যাম্পও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সীমান্ত বরাবর ভারী অস্ত্রসমেত অতিরিক্ত ফোর্স মুভ করালো। মেজর মুনতাসির একদিকে যেমন ফল-ইন পার্টি গোছাচ্ছিলেন তেমনি আরেকদিকে তার হাতের ওয়ারলেস দিয়ে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রত্যেক বেসক্যাম্প থেকে সীমান্ত লাগোয়া দূর্গম পাহাড় বরাবর তিন মিনিট পর পর মর্টার শেল চার্জ করতে নির্দেশ দিলেন। ওদিকে সাড়াশি অভিযানের জন্য ব্যাটালিয়ন সদরসহ প্রত্যেক বেসক্যাম্পের সদস্যরা প্রস্তত হচ্ছিলো….। (চলবে)

 

 

বিঃদ্রঃ এটি নিছক একটি গল্প এবং লেখকের মস্তিষ্কের একটি আবিষ্কার মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। অতিতে বা অদূর ভবিষ্যতে এই গল্পে উল্লেখিত কোন স্থান, কাল, চরিত্র কোন জীবিত বা মৃতব্যাক্তির কাহিনীর সাথে মিলে গেলে সেটি নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার, এজন্য লেখক কোনভাবেই দায়ী নন। সেইসাথে এই গল্পের সকল ছবিই মাত্র প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

লেখায়ঃ এইচ এম মেহেদী হাসান অর্নব ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments