য় পর্বের পর…

মধ্যরাতেই বিজিবির এই ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরসহ প্রত্যেক বেস ক্যাম্পে যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ শুরু হলো, বসানো হলো অপারেশন কন্ট্রোল বোর্ড।

এরই মধ্যে মেজর লিয়াং এর নির্দেশে বর্মী কমান্ডোদের ৪র্থ দলটি অতর্কিত হামলা চালানোর জন্য ছুটে এলো আরো একটি বিজিবি পোস্টের কাছাকাছি। কিন্ত তারা ম্যাপে উল্লেখিত সেই বিজিবি পোস্টে কোনো সৈনিককেই পেলোনা। এমনটা তো হবার কথা ছিলো না। ৪র্থ দলটির টিম লিডার বর্মী সেনা ক্যাপ্টেন থেরেসা জং চারপাশটা একবার দেখে নিলো কিন্ত না কেউ’ই নেই আশে পাশে। এবার সে তার দলের এক সৈনিককে পোস্ট লক্ষ্য করে সাইলেন্সার লাগানো রাইফেল দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করার নির্দেশ দিলো এবং ২০ রাউন্ড ফায়ার করলো বর্মী সৈনিক।

কোন জবাবী ফায়ার বা সাড়া শব্দ তো নেই, শুধুই নিরবতা। এসব দেখে ক্যাপ্টেন জং উচ্ছাসিত হয়ে ওয়ারলেসে মিশন লিডার মেজর লিয়াং কে পোস্ট দখলের খবর জানালেন। মেজর লিয়াং তাকে পোস্টে গিয়ে মাইন পুতে আসার জন্য বললেন। ক্যাপ্টেন জং উৎসাহের সহিত পোস্টে এসে গর্ত খুড়তে লাগলো। সাথে তার দলের বাকী নয় সদস্যও একত্রে এসে জড়ো হলো পোস্টে। ক্যাপ্টেন জং ও তার দলকে বেশ খুশিই মনে হচ্ছে কারণ তার দল বিনা সংঘর্ষেই পোস্টে পৌছে গেছে এবং মাইন পুতছে। অবশ্য আগে যেসব পোস্টে হামলা করা হয়েছিলো সেগুলোতেও এভাবেই মাইন পোতা হয়েছে। যাতে উদ্ধার অভিযান চালাতে এসেও বিজিবি সদস্যরা আরো হতাহত হয়। বিজিবির পঞ্চম পোস্টে হামলা করার জন্য মেজর লিয়াং তার পঞ্চম দলকে প্রস্তত করছেন।

ক্যাপ্টেন জংয়ের দল ইতিমধ্যে ৩টি মাইন পুতেছে এবং অন্যগুলোরও প্রক্রিয়া চলছে। মোট ১০ টি মাইন পোতা হবে এই পোস্টের আশে পাশে। যেমনটা রোহিঙ্গাদের যাতায়াতের রাস্তায় পোতা হয়েছিলো। এই টিমের সব সদস্যরাই মন দিয়ে মাইন পোতার কাজ করছিলো। কারণ পিন খুলে মাইন পোতাটাও বেশ রিস্কি ব্যাপার। এমন সময় হঠাৎ চারদিক থেকে শুরু হলো এসএমজিএলএমজির ব্রাশ ফায়ার! সেই সাথে সুবেদার আল আমিনের নিক্ষেপ করা হ্যান্ড গ্রেনেডও যথাস্থানে ব্লাস্ট হলো। বিজিবির ১২ সদস্য কর্তৃক ৩ মিনিটের এই মিনি এ্যাম্বুশে ১০ বর্মী কমান্ডো নিহত হলো। সুবেদার আল আমিন এবার বড় ডাল পালা ও বস্তা দিয়ে বানানো অস্থায়ী বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে এলেন এবং অন্য সৈনিকদেরও সাবধানে এগুতে বললেন। সুবেদার আল আমিন দেখলেন পোস্টের আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বর্মী কমান্ডোদের নিথর দেহ ও অস্ত্রশস্ত্র।

হঠাৎ নিহত ক্যাপ্টেন জং এর ওয়ারলেস বেজে উঠলো। বর্মী ভাষায় মেজর লিয়াং দ্রুত ক্যাপ্টেন ও তার দলকে ফিরে আসতে বলছিলেন, কিন্ত সুবেদার আল আমিন কিছুই বুঝলেন না সে ভাষার। তবে এটুকু ঠিকই বুঝলেন যে আক্রমনকারীরা সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং তারা বেশ প্রস্ততি নিয়েই এসেছে। ওয়ারলেস দেখে সে আরো বুঝলো যে এরকম আরো বেশ কয়েকটা দল আক্রমণের জন্য এসেছে, যারা কোন একজন অফিসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও হচ্ছেন। সুবেদার আল আমিন ঘটনার বিবরণ ও তথ্য ওয়ারলেস মারফত মেজর মুনতাসিরের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। মেজর মুনতাসির এবার আরো ভালো কিছু ধারণা পেলো মধ্যরাতের এই শত্রুবাহিনী সম্পর্কে।

মূলত সুবেদার হারুনের পোস্টে হামলা হবার পর পরই অন্য পোস্টের বিজিবি সদস্যরা হাই এলার্ট হয়ে যায়। বেস ক্যাম্প থেকেও অতিরিক্ত ফোর্স ও গানম্যান পাঠানো হয়। মেজর মুনতাসিরের নিশ্চিত ধারনা ছিলো আজ রাতে বেশ কয়েকটি পোস্টেই হামলা হতে পারে। তাই তিনি সকল বিজিবি সদস্যদের স্ব-স্ব পোস্ট থেকে ৫০০ গজ দূরে গুপ্ত পজিশন নিয়ে আক্রমনের জন্য তৈরি থাকতে বলেন। আর ঠিক তার ধারনা মতই সুবেদার আল আমিনের পোস্টে হানা দেয় বর্মী বাহিনী।

(উল্লেখ্য মেজর মুনতাসির বিশেষ কিছু কাজ করে ব্যাটালিয়নের সিনিয়র চারজন অফিসার নিয়ে অপারেশন কন্ট্রোলরুমে বসেন। মেজর মুনতাসিরের বিশেষ সেই কাজ কি ছিলো তা ৫ম পর্ব তথা শেষ পর্বে আসছে)

মেজর লিয়াং চো ইতিমধ্যেই তার পঞ্চম দলকে বিজিবির ৫ম পোস্টে হামলার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। তবে ক্যাপ্টেন জংয়ের নেতৃত্বাধীন ৪র্থ দলটি এখনো না ফেরায় মেজর লিয়াং বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার চিন্তা আরো বাড়লো যখন বর্মী এই মেজর দেখলো জঙ্গলের মাঝখানে তার অস্থায়ী এ ক্যাম্প থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে একটি মর্টার শেল বিস্ফোরিত হলো। তাই মেজর লিয়াং দ্রুত মুভ করার নির্দেশ দিলো তার দলকে।

মেজর লিয়াংয়ের পূর্ব নির্দেশ মতো বিজিবির ৫ম পোস্টের দিকে ছুটে যাওয়া বর্মী কমান্ডোদের দলটি পরিকল্পিত আক্রমন শুরু করে জনমানবশূন্য বিজিবি পোস্টের উপর। বেশ কয়েক মিনিট ফায়ারিং করার পর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে এ দলটির ক্যাপ্টেন হ্লা চি দৌড়ে এসে পড়েন পোস্টে। পোস্ট জয়ের আনন্দে সে নেচে ওঠে রাইফেল মাথায় নিয়ে। তার সাথে যোগ দেয় দলের অন্য সদস্যরাও। ঠিক তখনি সেই পোস্ট থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে পজিশন নিয়ে থাকা সুবেদার আলমগীর ওয়ারলেসে ফায়ার শব্দটি উচ্চারণ করলেন। সাথে সাথে বেসক্যাম্প থেকে ফায়ার করা ২টি মর্টার গোলা নির্ধারিত লক্ষ্যে ছুটে আসলো এবং বর্মী ক্যাপ্টেন হ্লা চির অস্থায়ী উৎসবের স্থায়ী ইতি হয়ে গেলো। পোস্ট উড়ে গেলো সাথে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো প্রত্যেক বর্মী সৈন্যের দেহগুলো।

সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে মেজর লিয়াং দেখতে পেলো তাদের আশ্রয় নেয়া জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় লাগাতার মর্টার শেল বিস্ফোরিত হচ্ছে। মেজর লিয়াং এরকমটা একবারও ভাবেননি। তিনি ভেবেছিলেন ২ঘন্টার মধ্যে সীমান্ত লাগোয়ো আটটি বিজিবি পোস্ট ধ্বংস করে মিশন শেষ করে চলে যাবেন। কিন্ত একি হলো! মেজর লিয়াং এবার বুঝতে পারলেন যে তার ৪র্থ দলটি কেনো আর ফেরেনি। তিনি এটাও বুঝতে পারলেন তার পঞ্চম দলটিও কোন না কোন বিপদে পড়বেই। মেজর লিয়াং ওয়ারলেস হাতে নিলেন এবং ৫ম দলকে দ্রুত ব্যাক করার নির্দেশ দিতে যাবেন ঠিক এমন সময়…(চলবে)

 

 

বিঃদ্রঃ এটি নিছক একটি গল্প এবং লেখকের মস্তিষ্কের একটি আবিষ্কার মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। অতিতে বা অদূর ভবিষ্যতে এই গল্পে উল্লেখিত কোন স্থান, কাল, চরিত্র কোন জীবিত বা মৃতব্যাক্তির কাহিনীর সাথে মিলে গেলে সেটি নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার, এজন্য লেখক কোনভাবেই দায়ী নন। সেইসাথে এই গল্পের সকল ছবিই মাত্র প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

লেখায়ঃ এইচ এম মেহেদী হাসান অর্নব ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments