তুরস্কের তৈরি অত্যাধুনিক অটোকার কায়া মডেলের গাড়ি হতে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আপকামিং মাইন প্রোটেক্টেড ভেহিকল (MRAP)।

সম্প্রতি ভারী সামরিক যানবাহন তৈরিতে তুরস্ক অনেক এগিয়ে গেছে। সার্ভিসে আসামাত্রই তাদের বানানো এপিসি আইএফভিসহ নানা জাতের গাড়িগুলো রপ্তানির মুখ দেখছে। প্রোডাকশন লাইনে যাওয়ার আগেই তাদের ব্যাটল ট্যাংকের উপর অনেক দেশ নজর দিয়েছে। তুর্কি সমরাস্ত্রের বাজারের অন্যতম কাস্টমার হিসেবে বাংলাদেশ সর্বশেষ অটোকার কায়া MRAP অর্ডার করেছে।

এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কোবরা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য অটোকার কোবরা-২ IMV কেনা হয়েছিল।

অটোকার কায়া গাড়িগুলো প্রধানত সৈন্য পরিবহন ও টহলদারির কাজে ব্যবহার করা হয়। এর প্রটেকশন সিস্টেম অনেক উন্নত। মেটাল শীটের বডির পাশাপাশি অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বাইরের দিকে আরও একটি পুরু মেটাল শীট লাগানো হয়েছে। ফলে এন্টি ট্যাংক মিসাইলের মত ভয়াবহ মিসাইল বা ১২০ মি.মি. কামানের গোলার আঘাত খেলেও এটি অনায়াসে আঘাত হজম করে নেয়। বাইরে শীট পুরো আঘাত হজম করে নেয়ায় মেইন বডিতে প্রভাব পড়েনা।

Otokar Kaya

এমনিতেই তুরস্কের মেটাল শীট নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে সকলকে অবাক করে দিয়েছে। সিরিয় যুদ্ধে তুরস্কের আধুনিক গাড়িগুলো অনেক সহজেই কামান ও রকেটের গোলা হজম করে যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে গেছে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত মেটাল শীট থাকা মানেই অটোকার কায়া গাড়ির নিরাপত্তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়া, নানা ধরনের সেন্সর ও প্রযুক্তির কারনে এটি দিনে-রাতে, রোদ-বৃস্টি, ঝড়ে, কুয়াশায় বা অন্য যেকোন প্রতিকূল পরিবিশে অনায়াসে চলাচল করতে সক্ষম।

Otokar Kaya

গাড়িটির দৈর্ঘ্য ৬.৫ মিটার, প্রস্থ ২.৫ মিটার, উচ্চতা ২.৯ মিটার এবং ওজন ১২.৫ টন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ২১৮ এইচপি টার্বো ডিজেল ইঞ্জিন। ফলে এর গতি অন্য যে কোন দেশের MRAP থেকে অনেক বেশী। যেখানে অন্য দেশেরগুলো ঘন্টায় ৭০-৭৫ কি.মি. এর বেশী ছুটতে পারেনা সেখানে তুরস্কের অটোকার কায়ার গতি ঘন্টায় ৯৬ কি.মি.(অবশ্য তুরস্কের কাছে এর চেয়ে আরো অনেক দ্রুত ছুটতে পারে সেরকম MRAP রয়েছে। আসলে ঝটিকা অপারেশন চালানো ও দ্রুত শত্রু এলাকা ত্যাগ, শত্রু এলাকায় দ্রুত ঢুকে পড়ে অভিযান চালানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই প্রচন্ড গতিকে একটি এডভান্টেজ হিসেবে গন্য করা হয়।

Otokar Kaya

আর গতির কারনে অন্য কোন কামান বা এন্টি-ট্যাংক রকেট বা ননগাইডেড অস্ত্র সহজে এর গায়ে আঘাত হানতে পারেনা। প্রচণ্ড গতির সাথে এর রেঞ্জও অত্যাধিক। অন্য দেশের বেশীরভাগ গাড়ির রেঞ্জ ৪৫০-৬০০ কি.মি. হলেও অটোকার কায়ার রেঞ্জ ৮০০ কি.মি. !

Otokar Kaya

 

এবার এক নজরে এটি সম্পর্কে জেনে নিইঃ

  • উৎপত্তিস্থলঃ তুর্কি
  • ডিজাইনারঃ অটোকার
  • ওজনঃ ১২,৫০০ কেজি
  • দৈর্ঘ্যঃ ৬৪৮৩ মি.মি.
  • প্রস্থঃ ২৫০০ মি.মি.
  • উচ্চতাঃ ২৯১৬ মি.মি.
  • ক্রুঃ ২+১০ জন
  • অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৮০০ কি.মি.
  • স্পিডঃ ৯৬ কি.মি./ঘন্টায়
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটিঃ ২০০ লিটার
  • ইঞ্জিনঃ ৪ সিলিন্ডারের ২১৮ হর্স পাওয়ার সম্বলিত টার্বো ডিজেন ইঞ্জিন
  • ভ্যারিয়্যান্টসঃ ট্রুপস পরিবহণ বা কার্গো পরিবহণ
Otokar Kaya Cargo

মালামাল বা রশদ পরিবহণের জন্য অটকার কায়ার কার্গো ভ্যারিয়ান্ট

Otokar Kaya

সৈন্য পরিবহনকারী অটোকার কায়া

MRAP আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য একটি আদর্শ অস্ত্র। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামো বিবেচনা করলে বাংলাদেশের যুদ্ধক্ষেত্রে MRAP এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। এর ১২.৭ মি.মি. হেভী মেশিনগান একদিকে যেমন শত্রুসেনা নিধন করতে পারে তেমনি প্রয়োজনে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া ড্রোন বা হেলিকপ্টারেও আঘাত করতে পারে; তেমনই একই মেশিনগান দিয়েই কিছু কিছু এপিসি, MRAP এর আর্মর ভেদ করে ভেতরে থাকা সৈন্যদের হত্যা করা যায়।

দুরন্ত গতি, বিশাল রেঞ্জ, শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং দারুন পারফরমেন্সের অধিকারী এই গাড়িটি সেনাবাহিনীর শক্তি অনেক বৃদ্ধি করবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর MRAP টেন্ডারে এটি বিজয়ী হয়েছে এবং তা কেনার জন্য চুক্তিও হয়ে গেছে।

Facebook Comments

comments