বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ এবং প্রায় ৭০০ এর অধিক নদী বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রা এবং বেঁচে থাকার জন্য নদীগুলোর গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য এসব নদী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম।সাধারনভাবে নদী হলো শত্রুপক্ষের জন্য একটি Physical Barrier। কারন স্থলপথে আক্রমণ করতে হলে এসব নদী এবং নদীমাতৃক দেশগুলো অনেক বড় Psychological Advantage পেয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বপ্রথম রিভারাইন ব্যাটালিয়ন গঠিত হয় যমুনা নদীর অববাহিকায়। পদাতিক বাহিনীর সাথে সাথে নদীপথে আক্রমণ পরিচালনাসহ অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য গঠিত হয় এই রিভারাইন ব্যাটালিয়ন (Riverine Battalion).

 

মিশন এন্ড ক্যাপাবিলিটিস/রিভারাইন ব্যাটালিয়নের কাজঃ

রিভারাইন ব্যাটালিয়নগুলো মুলত পদাতিক বাহিনীকে সাপোর্ট এবং পরিবহন কাজে সহায়তা করে থাকে।এছাড়া রিভারাইন ব্যাটালিয়নের অন্যান্য কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,

  • নদীপথে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রবেশ পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • নদীপথের পাশাপাশি নদীর উপকূল সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে প্রতিহত করা।
  • নিজ বাহিনীর সদস্যদের পরিবহনের ব্যবস্থা করা।
  • পদাতিক সেনাদের/সরঞ্জামাদি পরিবহন।
  • নদীর এলাকায় সার্ভেইলেন্স ও সার্ভে পরিচালনা করা।
  • রিভারাইন মুভমেন্ট এর সময়ে কনভয় কে এস্কোর্ট করা এবং হামলা থেকে সুরক্ষা দেয়া।
  • ব্রিজ রক্ষা করা।
  • মানব সম্পদের নিরাপত্তা দেয়া।
  • যুদ্ধের সময়ে River Blockade করা।

 

রিভারাইন ব্যাটালিয়নের গঠনঃ

সেনাবাহিনীর রিভারাইন ব্যাটালিয়ন ৪ টি মুল অংশ নিয়ে গঠিত।

১.ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার
২.দুইটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।
৩.একটি রিভারাইন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি।
৪.একটি HQ কোম্পানি।

 

ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং অস্ত্রসস্ত্রঃ

রিভারাইন ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন টাইপের, আকারের এবং কাজের ওয়াটার ভেসেল (Water Vessel) এবং অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

Type-A vessel:

এগুলো মুলত বেশ বড় এবং ভারী জাহাজ।সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে Landing Craft Tank (LCT), LCU ইত্যাদি। এগুলো মুলত পরিবহনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলোতে
শক্তিশালী অস্ত্রসস্ত্রসহ এয়ারডিফেন্স সিস্টেম (MANPAD) থাকে।

Type-B vessel:

এগুলো মুলত Troops Carrying Vessel (TCV).সেনা পরিবহন এবং ভুমিতে আক্রমণের জন্য এসব ভেসেল ইউজ করা হয়।

Type-C vessel:

এগুলো কমান্ড ভেসেল এবং Landing Craft Vehicle. এগুলোর নিরাপত্তার জন্য হেভি মেশিনগান থাকে।

Type-D vessel:

এগুলো এসল্ট ভেসেল যা সাইজে ছোট এবং ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন। এই ভেসেলগুলো ইন্টারসেপ্ট এবং এটাকের কাজে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া রিভারাইন ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন ধরনের Assault weapons, Close quarter fighting weapons, Anti Aircraft, Anti Tank, HMG, GPMG, 60mm Morter, ATGM ইত্যাদি ইউজ করে থাকে। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জামের মধ্যে আছে,

  • Reconnaissance & Survey vessel
  • Salvage & Recovery craft
  • Track dozer, Dumper & Excavator
  • Dreger
  • BK Bridge
  • Motor Tug
  • Assault boat & Speed boat

Riverine Engineering Company (RE):

RE কোম্পানি হলো সাইজে তুলনামূলক ছোট। প্রতিটি কোম্পানি একটি Company HQ, ২/৩ টি প্লাটুন আর একটি সাপোর্ট প্লাটুন নিয়ে গঠিত।নরমাল প্লাটুনগুলো Type-D vessel ইউজ করে আর সাপোর্ট প্লাটুন দরকারমত এদের সাপোর্ট প্রদান করে থাকে।

Transport Company:

এই কোম্পানি সেনাবাহিনীর ট্যাংক, এপিসি, ARV, IFV এবং সেনা পরিবহন করে থাকে। বিভিন্ন মডেলের LCT, LCU এবং ট্রান্সপোর্ট শিপ ইউজ করে থাকে।

Special Company/Platoon:

এরা বিভিন্ন সরঞ্জাম যেমন Excavator, BK Bridge, Motor Tug ইউজ করে থাকে।

HQ Company:

এরা আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত,

  • Battalion Morter Platoon – এরা 82mm এবং 63mm মর্টার ইউজ করে।
  • Logistics Platoon- Vehicle operation এবং store section
  • MG Section- 7.62mm মেশিনগান অপারেট করে।
  • Signal Section- এরা সিগনাল এবং যোগাযোগ রক্ষা করে।

 

এছাড়া রিভারাইন ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকেও অনেক সাপোর্ট পেয়ে থাকে যার মধ্যে vessel support (LCU), Naval Gun support, Logistics support, AD support, Navigation, Training ইত্যাদি।

রিভারাইন ব্যাটালিয়নের Command & Control System নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা হবে।

লেখায়ঃ DTB ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments