স্কাড ব্যালিস্টিক মিসাইল পৃথিবীতে ব্যাপক পরিমাণে ও সবচেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার করা একটি মিসাইল। উক্ত মিসাইলটির পরে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর কোরিয়া এর উপর ভিত্তি করেই অনেক মিসাইল তৈরি করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এই মিসাইল প্রথমে আসে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫১ সালে। বাস্তবে স্কাড শব্দটির প্রথম ব্যবহার করে ন্যাটো, তারা এসএস-১বি স্কাড-এ নামকরণটি করে, যা দিয়ে সোভিয়েত আর-১১ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বোঝানো হতো।

 Scud A

রাশান মিউজিয়ামে স্কাড-এ

১৯৫১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নতুন এক মিসাইল নিয়ে আসে যার রেঞ্জ ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এর নাম ছিল আর-১। ক্ষেপণাস্ত্রটির নামও ছিল ন্যাটো প্রদত্ত নাম এসএস-১ স্কানার, এটির ডিজাইন ছিল জার্মানির ভি-২ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় অবিকল নকল।

পরবর্তীতে আর-১১ নামক মিসাইল তৈরি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যাতে ছিল ভি-২ থেকে আহরিত প্রযুক্তি। কিন্তু এটির নকশা ছিল নতুন ও এক্যুরেসি ছিল জার্মান মিসাইল থেকে অনেক উন্নত। আর-১১ এর ডিজাইন করে ভিক্টর মিকায়েভ। পরবর্তীতে আসে এটির উন্নত ভার্সন আর-১৭। এটি ছিল স্কাড বি  সিরিজের মিসাইল, যা সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৫৭ সালে।

জার্মান ভি-২

সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা এতে নতুন একটি বিষয় সংযুক্ত করেন যা একে অন্যান্য মিসাইল থেকে এগিয়ে নেয়। যেখানে ভি-২ এর একাধিককক্ষ বিশিষ্ট, সেখানে স্কাড ছিল এক চেম্বারের ইঞ্জিন যা ছিল অনেক সরল আর-১১ তে সবচেয়ে বৈপ্লবিক উদ্ভাবনটি ছিল এর ইঞ্জিন, যার নকশাকার এ.এম. ইসায়েভ। নকশা থেকে এটি ছিল অনেক সরল এবং এতে ইঞ্জিনের ঘরঘর শব্দ দূর করতে এন্টি-অসিলিয়েশন ব্যাফল সংযুক্ত করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবহৃত অন্যান্য বৃহদাকার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে এটি অনেক এগিয়ে ছিল। মূলত এটি সমস্যা কাটিয়ে ১৯৬১ সালে সার্ভিসে আসে।

উ.কোরিয়ান হোয়াসং-৬ (স্কাড সি)

বিভিন্ন সময়ে এর উন্নত ভার্সন বের হয়। উক্ত মিসাইলটির ভার্সন গুলো হল এ, বি, সি, ডি  যার রেঞ্জ যথাক্রমে ১৮০, ৩০০, ৬০০ ও ৭০০ কিলোমিটার। এবং মিসাইলগুলির গতি ম্যাক ৫.৫  সেইসাথে এতে প্রচলিত ওয়ারহেড থেকে শুরু করে কেমিক্যাল ও পরমাণু ওয়ারহেড ও বহন করা যায়। এটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ইয়েমেন-সৌদি যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, চেচনিয়া যুদ্ধ, আফগানিস্থান যুদ্ধ, সিরিয়া, লিবিয়া যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ সহ অনেক যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে।

সিরিয়ান স্কাড-বি মিসাইল

উত্তর কোরিয়া, ইরাক, ইরান, মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন উক্ত মিসাইলগুলির উপর ভিত্তি করেই তাদের মিসাইল ইউনিট দাড় করায়। তবে স্কাড মিসাইলের এক্যুরেসি প্রথম দিকে ভাল ছিল না তাই পরবর্তীতে এটি উন্নত করা হয়। স্কাড মিসাইল ও এর খুঁটিনাটি সম্পর্কে পশ্চিমারা যথেষ্ট অবগত কারণ তারা ইরাক, আফগানিস্থান, সার্বিয়া থেকে অনেক আগেই মিসাইল গুলি সংগ্রহ করেছিলো।

Facebook Comments

comments