মেশিনগান আবিষ্কারের পর এর প্রথম ও প্রধান সমস্যা ছিলো ব্যারেল। একটানা কয়েকশো রাউন্ড গুলি ফায়ার করার পর ব্যারেল গলে যেতো। ব্যারেল সমস্যার সমাধানের পর সবাই হালকা মেশিন-গান তৈরি করতে চাইলো যা খুব সহজে বহন করা যাবে এবং ফায়ার পাওয়ার অনেকটা মেশিন-গানের মত হবে। সেই ধারনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হলো Sub Machine Gun যাকে আমরা সংক্ষেপে SMG বলে থাকি। সাব-মেশিন গানের জন্ম কোন দেশে হয়েছে এই নিয়ে বহু বিতর্ক আছে, তবে আমাদের মতে সম্ভবত সাব-মেশিন গানের জন্ম হয়েছে ইতালিতে। যদিওবা অনেকে মনে করেন সাব-মেশিন গানের জন্ম জার্মানীতে। অন্যান্য মেশিন গান ভারী কাতুর্জ ব্যাবহার করলেও Sub Machine Gun বা SMG মূলত পিস্তল রাউন্ড ব্যাবহার করে থাকে। আজকে যে সাব-মেশিনগান গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা ডিজাইন, একুরেসি, কার্যক্ষমতা ও সার্ভিস রেকর্ডে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
Berett M1918: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় ১৯১৮ সালে ইতালীতে সার্ভিসে আসে এম-১৯১৮ সাব-মেশিন গান। এই মেশিন গানকে মনে করা হয় প্রথম সফল সাব-মেশিন গান। যদিও এর প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো জার্মান সাব-মেশিন গান এমপি-১৮! যাইহোক এই মেশিনগান ১ম ও ২য় দুই মহাযুদ্ধেই ব্যাবহার করা হয়। এর ওজন তিন-কেজির একটু বেশি, ক্যালিবার ৯মি.মি. পিস্তল রাউন্ড সেইসাথে ফায়ার রেট প্রতি মিনিটে ৯০০ রাউন্ড।
MP-18: জার্মান এমপি-১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৮ সালে সার্ভিসে আসে এবং একে প্রথম সফল সাব-মেশিন গান দাবী করা হয়। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইতালীর এম১৯১৮ থেকে বেশ উন্নত ও সফল ছিলো এমপি-১৮ সাবমেশিন গান। জার্মান এমপি-১৮ সফল হওয়াতে ব্রিটিশরা এর ডিজাইন চুরি করেছিলো যা Lanchester Submachine Gun নামে পরিচিত। এমপি-১৮ এর ওজন ৪ কেজির মত, ক্যালিবার ৯মি.মি. পিস্তল রাউন্ড, সেইসাথে এর ফায়ার রেট প্রতি মিনিটে ৫০০ রাউন্ড। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ চীন-জাপান যুদ্ধ, আইরিস গৃহ যুদ্ধ, চায়না গৃহ যুদ্ধে এই সাব-মেশিন গান ব্যাবহৃত হয়েছে। পরবর্তীতে এর বিভিন্ন ভার্সন আসে যেমন MP-28, MP-35.
Thompson Machine Gun: ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাব-মেশিনগানের মধ্যে একটা হচ্ছে Thompson machine gun বা Tommy gun! জন টি থমসন এই সাব-মেশিন গানের ডিজাইন করেন এবং ১৯২১ সালে এর প্রোডাকশন শুরু হয়। এই সাব-মেশিন গান আসার সাথে সাথেই আমেরিকান পুলিশ ও গ্যাং, গডফাদার, ব্যাংক ডাকাত থেকে শুরু করে ছিচকে চোর পর্যন্ত চলে যায় এই সাব মেশিনগান এবং গ্যাংস্টাররা এর বিভিন্ন কোড নাম দেয় যেমনঃ Chicago Typewriter! তাছাড়া এর অন্যান্য নাম হচ্ছে Annihilator, Chicago Piano, Chicago Style, Chicago Organ Grinder, Trench Broom, Trench Sweeper, The Chopper!
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে আমেরিকান মিলিটারীতে সার্ভিসে আসে এই জনপ্রিয় মেশিন গান। ব্রিটিশদের যেহেতু স্ট্যান্ডর্ট সাব-মেশিন গান ছিলো না তখন তারা আমেরিকা থেকে বিশাল পরিমানে থম্পসন কিনে নিয়ে যায়। এর ইউনিক ডিজাইন ও রিলাইবেলিটির জন্য এটি অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়। থম্পসন মেশিন-গানের ওজন প্রায় ৫ কেজির মত, ক্যালিবার .৪৫ এসিপি (বক্স ম্যাগাজিন , ড্রাম ম্যাগাজিন) ইফেক্টিভ রেঞ্জ ৫০-১০০ গজ, রেট অফ ফায়ার ৮০০ রাউন্ড প্রতি মিনিট। এর রিকয়েল অনেক বেশি থাকার কারনে ফায়ার করার সময় উচ্চ রিকয়েলের জন্য উপরে উঠে যেত তাই নিয়ম ছিলো নিচু করে ফায়ার করা তাহলে এইম ঠিক থাকতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ সহ বিশ্বে প্রায় ৩৮ টিরও বেশি দেশে সার্ভিস দিয়েছে এই জনপ্রিয় সাবমেশিন গান।
MP-40: জার্মানীর আরেক লেজেন্ডারী মাস্টার পিস হচ্ছে এমপি-৪০ সাবমেশিন গান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবচেয়ে আধুনিক সাবমেশিন গান ছিলো এই এমপি-৪০ সাব-মেশিনগান। থম্পসন ও সোভিয়েত পিপিএসএইচ থেকে বেশি একুরেট ও কার্যকরি অস্ত্র ছিলো এই এমপি-৪০! ওজন ৪ কেজি থেকে একটু কম, ক্যালিবার ৯মি.মি, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১৫০-২০০ গজ, রেট অব ফায়ার ৫৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিট। এই মেশিনগান নাৎসি জার্মানীতে প্রায় ১.১ মিলিয়নেরও বেশি বানানো হয় এবং যুদ্ধের পর এর প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়।
Suomi Kp-31: জানা মতে খুব কম মানুষই চিনে এই সাব-মেশিনগানকে। অথচ এর ডিজাইন চুরি করে বানানো হইছে বিখ্যাত সোভিয়েত PPSH-41 SMG! এর জন্ম ফিনল্যান্ডে এবং সার্ভিসে ছিলো ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজি, ক্যালিবার ৯মি.মি. (ড্রাম ম্যাগাজিন) রেট অব ফায়ার ৯০০ রাউন্ড, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১৫০-২০০ গজ।
PPSH-41: এটি বিখ্যাত সোভিয়েত সাব-মেশিনগান যা কিনা ফিনল্যান্ড থেকে চুরি করা ডিজাইন। সোভিয়েত এই মেশিন গান ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত লাল বাহিনীর কাছে দেখা যেত। সোভিয়েতরা প্রায় ৬ মিলিয়ন তৈরি করে ছিলো। এর জনপ্রিয়তার কারনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চায়না ও উত্তর কোরিয়া লাইন্সে কিনে বানায় যা যথাক্রমে Type-50, Type-49 নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়ান যুদ্ধে এর ভয়াবহতা আবার দেখেছিলো সারা বিশ্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৬০ পর্যন্ত সার্ভিসে ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে একে-৪৭ দিয়ে এটি রিপ্লেস করা হয়। এর ওজন প্রায় সাড়ে তিন কেজি, রেট অব ফায়ার ৯০০ রাউন্ড প্রতি মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১৫০ গজ, ক্যালিবার ৭.৬২ টোকারেভ পিস্তল রাউন্ড।
Sten Gun: আপনি বাংলাদেশী হলে এই সাব-মেশিনগানের নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন। এটা হচ্ছে বিখ্যাত ব্রিটিশ সাব-মেশিনগান, যা সার্ভিসে আসে ১৯৪১ সালে। এই সাব-মেশিনগান সার্ভিসে আসার পর অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। যেমনঃ ম্যাকানিজম খারাপ ছিলো, জ্যামিং সমস্যা ছিলো আর এর জন্য একে সবচেয়ে বিফল অস্ত্র গুলার মধ্যে ফেলা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে এর আপডেট ভার্সন আসার পর সবচেয়ে ভাল কিছু সাব-মেশিন গানের মধ্যে চলে আসে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আমারা গেরিলা আক্রমণের জন্য এই সাব-মেশিনগান ব্যাবহার করে ছিলাম। ব্রিটিশরা এটি প্রায় ৫ মিলিয়নের মত বানিয়েছিলো। এর ওজন প্রায় ৩ কেজির মত, ক্যালিবার ৯মি.মি. ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১০০ গজ, রেট অব ফায়ার ৬০০ রাউন্ড পার মিনিট। এর জনপ্রিয়তার কারনে বিশ্বের প্রায় ৫০ টির উপর দেশে এই মেশিন গান সার্ভিস দিয়েছে।
M-3 Submachine Gun: ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ১৯৪৩ সালে আমেরিকান মিলিটারী প্রথম সার্ভিসে আনে এম-৩ সাব-মেশিনগান যা Grease Gun নামে পরিচিত। এই সাব-মেশিনগান সর্ভিসে আনার মূল উদ্ধেশ্য ছিলো ক্লোজ কমব্যাটে সুপেরিটি অর্জন। থমসন থেকে এই সাব-মেশিনগান এগিয়ে ছিলো কারন এর ওজন কম ও রিকয়েল অনেক কম। এর ওজন ৩ কেজির একটু বেশি, ক্যালিবার .৪৫ এসিপি ও ৯মি.মি. রেট অব ফায়ার ৪৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিট এবং ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১০০ গজ। গ্রিজ গানের কার্যকারিতা ও সার্ভিস রেকর্ড অনেক ভাল যার কারনে এটি ১৯৪৩ সাল থেকে এখনো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে এই সাব-মেশিনগান ব্যাবহার হয়েছে।
Sterling Gun: এটি ব্রিটিশদের আরেক মাস্টারপিস সাব-মেশিনগান যা ১৯৪৪ সালে সার্ভিসে আসে। আপনি বাঙালী হলে এই সাব-মেশিন গানকে চেনার কথা কারন বাংলাদেশের বেশির ভাগ সিনেমায় গুন্ডা বাহিনীর হাতে এই সাব-মেশিন গানকে দেখা যেত। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে এই সাব-মেশিন গান ব্যাবহৃত হয়েছে যাকে অনেকে স্টেন গান বলে ভুল করতো। ব্রিটিশদের কলকাতার কারখানায় এই সাব-মেশিনগান বানানো হতো। ব্রিটিশরা চলে গেলে ভারতীয়রা এই সাব-মেশিন গান বানাতো এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচুর পরিমানে মুক্তিযোদ্ধাদের এই অস্ত্র দিয়েছিলো। ১৯৪৪ সালে থেকে বিশ্বের প্রায় ৬০ এরও বেশি দেশে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে এই সাব-মেশিনগান। এর ওজন প্রায় ২.৬ কেজির মতো যা সত্যিই খুব হালকা, ক্যালিবার ৯মি.মি. রেট অব ফায়ার ৫৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ প্রায় ২০০ গজের মত।
Type 100: এটি জাপানীদের তৈরী সাব-মেশিন গান যা ১৯৪২ সালে সার্ভিসে আসে। এর ওজন ৪ কেজির কাছাকাছি, ক্যালিবার ৮মি.মি. রেট অব ফায়ার ৪৫০ রাউন্ড প্রতি মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ প্রায় ১৫০ গজের মত।
Uzi Sub Machine Gun: এটি ইজরায়েলের তৈরি বিখ্যাত উজি সাব-মেশিনগান যা ১৯৫৪ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে। ডিজাইন, রিলাইয়েবেলিটি ও কার্যক্ষমতার জন্য খুবই জনপ্রিয় এই সাব-মেশিনগান। ওজন প্রায় সাড়ে তিন কেজি, ক্যালিবার ৯মি.মি. ও .৪৫ এসিপি, রেট অব ফায়ার ৬০০ রাউন্ড প্রতি মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ প্রায় ২০০ গজ। এই সাব-মেশিন গান পুলিশ, স্পেশাল ফোর্স থেকে শুরু করে বড় বড় সব গ্যাংস্টারদের প্রথম পছন্দের অস্ত্র। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়নমার এর কপি ভার্সন বানায়। এই সাব-মেশিনগান বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ব্যাবহার হয়, বাংলাদেশ র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান এই সাব-মেশিনগান ব্যাবহার করে থাকে।
FN P90: এই বিখ্যাত বুলপপ সাবমেশিন গানের জন্ম বেলজিয়ামে। এটি সার্ভিসে আসে ১৯৯১ সালে এবং সার্ভিসে আসার সাথে সাথেই এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হয়ে উঠে। এর কার্যকারিতা ও সার্ভিস রেকর্ড অনবদ্ধ। পৃথিবীর প্রায় সব স্পেশাল ফোর্সই তাদের সার্ভিসে এই সাব-মেশিনগান রাখতে চায়। এর ওজন ২.৬ কেজি, ক্যালিবার ৫.৫৭মি.মি. রেট অব ফায়ার ৯০০ রাউন্ড প্রতি মিনিট, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২০০ গজ। আমেরিকা সহ বিশ্বের প্রায় ৬০ উপর দেশে এই এই সাব-মেশিন গান ব্যাবহার হয়।
Kriss Vector: আমেরিকায় ২০০৬ সালে জন্ম হয় এইসাব-মেশিন গানের। এখনো আমেরিকান মিলিটারীতে সার্ভিসে আসেনি এই সাব-মেশিনগান। তবে বাংলাদেশ আর্মি তাদের প্যারা কমান্ডোদের জন্য এই সাব-মেশিনগান অর্ডার করেছে। এর ওজন প্রায়২.৭ কেজির মত, ক্যালিবার ৯মি.মি. ও .৪৫ এসিপি, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ১০০ গজের মত, রেট অব ফায়ার ১২০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে যেন ছোট এমজি-৪২ মেশিন গান।
Heckler & Koch MP-5: অ্যাসল্ট রাইফেলের জগতে যদি একে-৪৭ ও পিস্তলের জগতে যদি এম-১৯১১ লেজেন্ড হয়ে থাকে তাহলে সাব-মেশিনগানের জগতে লেজেন্ড হচ্ছে এমপি-৫! জার্মানদের মাস্টারপিস সাব-মেশিনগান হচ্ছে এই এমপি-৫! ১৯৬৬ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে এই সাব-মেশিনগান। গ্রেট ব্রিটেন, চীন, পাকিস্থান, ফ্রান্স, সৌদি আরব, তুরস্ক সহ ১২ টা দেশে এই সাব-মেশিন গানের কপি ভার্সন তৈরি করা হয়। এর ওজন বিভিন্ন ভার্সনে বিভিন্ন রকম যেমনঃ ২ কেজি, ২.৫ কেজি, ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্যালিবার হিসেবে ৯মি.মি পিস্তল রাউন্ড, রেট অব ফায়ার ৮০০ রাউন্ড প্রতি মিনিটে, ইফেক্টিভ রেঞ্জ ২০০ গজ। পৃথিবীর প্রায় সকল স্পেশাল ফোর্স তাদের পছন্দের তালিকায় সাব-মেশিনগান হিসেবে একে প্রথমে রাখবে। বাংলাদেশ আর্মির প্যারাকমান্ডো এই সাব-মেশিনগান ব্যাবহার করে। বিশ্বের ৯৫+ দেশে এই সাব-মেশিনগান সার্ভিসে আছে।
এই পোস্টে সাধ্যমত বিখ্যাত সব সাব-মেশিন গান গুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে তবে লেখা বড় হয়ে যাওয়ার কারনে কিছু সাব-মেশিন গানের নাম বাদ পড়েছে। যেমনঃ Scorpion Evo3 A1, Owen Gun, Mac-10, Mac-11, K1, K7, UMP Sub Machine Gun! আপনারা চাইলে এগুলো সার্চ করে দেখতে পারেন।
কিছু ছবিঃ
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.