আগের পর্বে বলেছিলাম আমেরিকার চাপাবাজির গল্প নিয়ে, আজ বলবো আমেরিকার গলাবাজির গল্প নিয়ে।

৩ জুলাই ১৯৮৮, তখন ইরান এবং ইরাক এর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইরান এয়ার ফ্লাইট ৬৫৫ তেহরান থেকে দুবাই এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে কিন্তু হরমুজ প্রণালীতে এসে আমেরিকান মিসাইল ক্রুজার ইউএসএস ভিন্সেনেস SM-2MR SAM এর মাধ্যমে শুটডাউন হয়।

USS Vincennes Firing

২৯০ জন ক্রু এবং যাত্রী এর মধ্যে সবাই মারা যায়। যদিও প্রথমে ফিলিস্তিনি একটি মিলিটারি সংঘটনকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।অবাক করার বিষয় হচ্ছে জাহাজটি ইরানের নিজেদের জলসীমায় ঢুকে মিসাইল ফায়ার করে।

শুধু তাই নয় এসময় তাদের একটি হেলিকপ্টারকে ইরানের গানবোট ওয়ার্নিং ফায়ার করে। ঘটনার পর ইরান প্রচন্ড ক্ষেপে যায়। তখন মার্কিন সরকার এর গলাবাজি শুরু হয়। মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলে যে তারা ভুল করে F-14 ভেবে ভুল করে শুটডাউন করে।

শুধু তাই নয় জাহাজ ক্রুরা দাবি করেন তারা উক্ত প্লেনের সাথে বারবার মিলিটারি ও সিভিলিয়ান রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি তে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করেন কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তারা যুদ্ধবিমান ভেবে ভুল করে বসে। এরপর ১৯৮৯ সালে ইরান এই হামলার জন্য আমেরিকার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে।

১৯৯৬ সালে আমেরিকা এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিতে রাজি হয় যার মধ্যে প্রায় ৬২ মিলিয়ন যাত্রীদের পরিবারকে অর্থাৎ প্রতি যাত্রির পরিবারকে প্রায় ২১৩,১০৩ ডলার এবং প্রায় ৭০ মিলিয়ন প্লেনের দাম ধরা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি Flight-655 কে ভুলে F-14 ভেবে শুট ডাউন করা হয়? আসলেই কি মিলিটারি ও সিভিলিয়ান রেফিও ফ্রিকুয়েন্সি তে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল, নাকি এটা আমেরিকার স্রেফ বানানো গল্প??

 

Iran Airlines Flight 655

চলুন যদিও আমি আপনাদের কে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারব না তবু কিছু প্রমাণ এবং কারন দেখাতে পারি যে এটি শুধু ভুলের কারনেই হয় নি। তাহলে আমাদের যেতে হবে এই ঘটনার কিছুদিন আগে…।

 

১৯৮৪ সালে যখন ইরাক ইরান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একদেশ অপরদেশে এয়ারস্ট্রাইক করা শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য ছিলো ওয়েল ট্যাংকার এ হামলা।

১৯৮৭ সালের মে মাসে ইরাকের এয়ারফোর্স ভুল করে ইউএস নেভির গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট ইউএসএস স্টার্ক এ হামলা করে বসে এতে ৩৭ জন ক্রু মারা যান। এসময় ইরান ও গানবোট এর সাহায্যে ফ্রিগেটে হামলা করে। এতে চটে গিয়ে ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে ইউএসএস সামুয়েল বি রবার্টস ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করে বসে।তখন এখান থেকে Operation Praying Mantis পরিচালনা করা হয় যাতে ইরানের শাহান্দ ফ্রিগেটের সলিল সমাধি হয়।

এতে ইরান ক্ষুদ্ধ হয়ে এয়ারস্ট্রাইক করে। এর ফলে আমেরিকা সুযোগ খুজতে থাকে। অতপর ৩ জুলাই ভিন্সেনেস হরমুজ প্রনালির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একটি এয়ারবোর্ন হেলিকপ্টার থেকে বার্তা পায় যে ইরানের একটি গানবোট থেকে গুলাগুলি হয়ছে। ঠিক তখন ই রাডার এ ধরা পরে একটি প্লেন। তখন তারা সিগনাল পাঠিয়ে ব্যর্থ হয়ে ২টি SM-2MR SAM নিক্ষেপ করে যার মধ্যে একটি প্লেনে আঘাত করে।

USS Vincennes

ইউএসএস ভিন্সেনেস

 

এখন দেখে নেই কেনো এটিকে দুর্ঘটনা বলে চাপিয়ে দেওয়া যায় না,

১. প্রথমতই ইউএসএস ভিন্সেনেস আইন ভেঙ্গে ইরানের জলসীমায় প্রবেশ করে।

২. তারা বলেছিলো তারা মিলিটারি ও সিভিলিয়ান ফ্রিকুয়েন্সি তে যোগাযোগ করেছিলো। কিন্তু উক্ত প্লেন এর ট্রান্সপন্ডার তখন সিভিলিয়ান ফ্রিকুয়েন্সি তে ছিল, তাহলে এটি বার্তা পায় নি কেন?

৩. প্লেন টি ট্রান্সপন্ডার থেকে squawk 3 code মোডে ছিল এবং সঠিকভাবে ট্রান্সমিট ও রিসিভ করছিলো, কিন্তু ইরান এর মিলিটারি ফাইটার গুলি squawk 2 ট্রান্সমিট করতো, আর এটা ভুল করার ও কথা নয়।

৪. এজিস কম্ব্যাট সিস্টেম এ রেকর্ড করা প্লেনের অল্টিচুড দেখা যাচ্ছিল প্লেন টি Bandar Abbas International Airport থেকে যাত্রা বিরতির পর উপরের দিকে ক্লাইম্ব করে উপরে উঠছিল।কিন্তু F-14 তো কম্ব্যাট ও এটাক ফরমেশনে উপরের দিকে ক্লাইম্ব করে না। তাহলে কি এজিস সিস্টেমের দেখানো রেকর্ড ভুল ছিল??

Control Room of USS Vincennes

এজিস ডিসপ্লে – ইউএসএস ভিন্সেন্স এর কন্ট্রোল রুম

৫. এত আধুনিক ফ্রিগেটে এটাক করতে কি শুধু ১টি F-14 আসলো??

৬. সুত্রমতে Bandar Abbas এ ইরানের কোনো এয়ারবেস ছিল না আর ওখানে F-14 ও ছিল না।

৭. জাহাজ থেকে ৭বার মিলিটারি ইমারজেন্সি সিগনাল এবং ৩ বার সিভিলিয়ান ইমারজেন্সি সিগনাল প্রেরণ করা হয় কিন্তু ১বার ও ইমারজেন্সি এয়ার ট্রাফিক সিগনাল পাঠানো হয়নি, এবং প্লেনটি মিলিটারি সিগনাল গ্রহণের জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ছিল না।

৮. জাহাজ ক্রু দাবি করেছিল প্লেনটি জাহাজের দিকে ৪৫০ নট স্পিডে আসছিলো এবং অনেক নিচু দিয়ে উড়ছিলো। কিন্তু এজিস সিস্টেমে দেখা যায় প্লেন ১২,০০০ ফুট উচু দিয়ে উড়ছিলো এবং আরো উপরে ক্লাইম্ব করছিলো এবং এর স্পিড ছিল ৩৯০ নট। এছাড়াও আরো অনেক কিছু উদাহরণ আছে যাতে পরিষ্কার বুঝা যায় যে এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা ছিলো না, এর পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য।

যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এটি স্বীকৃত যে এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা। কিন্তু এসব উদাহরণ এবং প্রমাণ বলে ভিন্ন কথা।

Airbus A300

দুর্ঘটনাকবলিত Airbus A300 বিমান

USS Vincennes

আক্রমণকারী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিন্সেনেস

Strait of Hormuz depicting intended path of Iran Air 655 and approximate location of downing

হমরুজ প্রণালীর দিকে Iran Air 655 শুট ডাউন করার স্থান

USS Vincennes firing missile

ইউএসএস ভিন্সেনেস থেকে মিসাইল ফায়ারিং এর দৃশ্য

Victims of Iran Air Flight 655

দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রী

লেখায়ঃ আসিফ মুস্তাফা ও নিজে সংযোজিত

Facebook Comments

comments