ঘটনার সূত্রপাত ১৯৫৯ সালে যখন ইউএস প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার চাইলেন সোভিয়েত জনগণ ক্যাপিটালিস্ট দেশের লোকদের লাইফ স্টাইল সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা লাভ করুক এবং নিজেরাই বুঝে নিক ক্যাপিটালিজম সেরা না কম্যুনিজম।

সে অনুযায়ী তারা রুশদের নিকট থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে মস্কোতে একটি আমেরিকান ন্যাশনাল এক্সিবিশন করে যেখানে আমেরিকানদের গৃহস্থালী সরঞ্জাম থেকে নিত্য দিনের খাবারের আইটেমও থাকে। এই মেলায় আমেরিকান সরকারের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে যান নিক্সন (তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি পরে প্রেসিডেন্ট হন)। স্বাভাবিক ভাবেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস ক্রুশ্চেভও যান এবং নিক্সনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

The American National Exhibition Hall

ক্রুশ্চেভ ছিলেন কিছুটা কোমল এবং চাইতেন সোভিয়েত জনগণ যেন আগের চেয়ে ভালো থাকে। তবে কম্যুনিজমের বেলায় কোন ছাড় নয়। সে প্রদর্শনীতে ক্রুশ্চেভ ক্যাপিটালিজম বনাম কম্যুনিজম তর্কে জড়িয়ে যান নিক্সনের সাথে। তখন জুলাই মাস। মোটাসোটা ক্রুশ্চেভ অল্প সময় পরই দরদর করে ঘামছিলেন। এটা লক্ষ্য করেন ডোনাল্ড কেন্ডাল যিনি তখন পেপসির মার্কেটিং’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ক্রুশ্চেভকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পেপসি পান করতে দেন। ক্রুশ্চেভ যখন গ্লাসে চুমুক দেন তখন আমেরিকান ফটোগ্রাফার সে ছবি তুলেন যা হয়ে যায় পেপসির সেরা ও এক শক্তিশালী বিজ্ঞাপণ।

পেপসি পান করার সময় সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ

আমেরিকায় তারা প্রায় বলে বেড়ায় যে আমেরিকার আগেই তারা (পেপসি) সোভিয়েত ইউনিয়ন ইলফিলট্রেট করছে!

তো স্বাভাবিক ভাবেই সেই এক্সিবিশন কোন পরিবর্তন আনে নি। বরং ইউ-২ প্লেন শ্যূট ডাউনের ফলে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়। আইজেনহাওয়ার পদত্যাগ করেন।

এরপর ১৯৭২ সাল। সেই নিক্সন এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও ডোনাল্ড কেন্ডাল পেপসির। কেন্ডাল দীর্ঘদিন ধরেই চাচ্ছিলেন যে করেই হোক পেপসি যেন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করে।

এই নিক্সন ও কেন্ডাল আবার বন্ধু। এক্ষেত্রে নিক্সনও চায় একটা মাইলফলক রাখতে। নিক্সন তখন পলিটিক্যাল পাওয়ার খাটায়। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে একটি বাণিজ্য চূক্তি করে।

সে বছরেই প্রায় সব কাজ শেষ হয়। কিন্তু গোল বাধে ডলার-রুবল এক্সচেঞ্জ করতে গিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবেশ করতে বাধা-নিষেধ অনেক আগেই করেছে মুদ্রাস্ফীতি রোধে। আবার রুবলের কোন আন্তর্জাতিক ভ্যালু নাই। তাই ঠিক হলো আমেরিকা পেপসি দেবে আর রাশিয়া দেবে ভদকা। রাশিয়ার প্রায় সব ভালো ভদকা ব্র্যাণ্ডের মালিক রাষ্ট্র। এর মাঝে অন্যতম সেরা হলো ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত Stolichnaya ভদকা যার রেসিপি তৈরী করেন বিখ্যাত কেমিস্ট দিমিত্রি মেন্ডেলেভ (রসায়নের পর্যায় সারণীর স্রষ্টা)।

এই চূক্তির মাধ্যমে ইউএসএসআরে প্রথম কোন পশ্চিমা পণ্য বাজার পেলো। একই সাথে পেপসি এলকোহল বেভারেজের ব্যবসা চালু করলো কারণ তারাই বিখ্যাত Stolichnaya ভদকার একমাত্র আমদানীকারক।

তবে এই চুক্তি শেষ হয় ১৯৮৯ সালে। চূক্তি নবায়নের সময় আবার বিপত্তি। কারণ তখনও ডলারের বিপরীতে রুবলের অচলাবস্থা কাটে নি। এবার রাশিয়া নতুন শর্ত জুড়ে দিলো। শুধু Stolichnaya ভদকা কিনলেই হবে না, আরো কিছু কিনতে হবে। এই সময়ের মাঝে পেপসি ২০টি ফ্যাক্টরী বসায় সোভিয়েত ইউনিয়নে।

কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নে এমন কিছু নেই যা আমেরিকায় নেই। যা আছে সেসবের কোয়ালিটিও ভালো না। একমাত্র সস্তায় অস্ত্র বানায় যা লেনদেন পেপসির জন্য ক্ষতিকর।

কিন্তু কি আর করা?

যেহেতু পেপসির বদলে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেয়ার কিছুই নেই। এর মাঝে নতুন চূক্তিতে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হবে। সত্তুরের দশকে রাশিয়ার ছিলো ভদকা আর আশির দশকে তা এসে দাঁড়ায় অস্ত্রতে।

রাশিয়া পেপসিকে ডিজেল পাওয়ার্ড ১৭টি সাবমেরিন, ১টি ফ্রিগেট, ১টি ক্রুজার ও ১টি ডেস্ট্রয়ার দেয় বিপরীতে পেপসি পায় সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যবসা করার সুযোগ।

তো যতদিন সে জাহাজগুলো পেপসির নিকট ছিলো তদ্দিনের জন্য তারা ছিলো বিশ্বের ৬ষ্ঠ শক্তিশালী নৌবহর। অবশ্য পেপসি শুধু পুরোনো যুদ্ধজাহাজ নয়, কিছু নতুন ওয়েল ট্যাঙ্কারও ক্রয় করে যা তারা একটি নরওয়েজিয়ান তেল কোম্পানীর কাছে লিজ দেয়। যুদ্ধজাহাজগুলো একটি সুইডিশ শিপ ব্রেকার কোম্পানী স্ক্র্যাপ করে।

লেখায়ঃ নাজমুস সাকিব ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments