নাৎসী জার্মান ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যাণ্ড আক্রমনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। মলোটোভ-রিবেন্ট্রোপ চুক্তির কারণে পোল্যাণ্ডের পূর্বাংশ দখল করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। জার্মানরা খুব অল্প সময়ের মাঝেই দূর্বল পোল্যাণ্ডকে কাবু করে ফেলে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে জার্মান ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে পোলিশ ঘোড়সওয়ার ক্যাভালরি যুদ্ধ করে।

পোল্যাণ্ড জয়ের পরেই সেখানে নাৎসীরা শুরু করে ব্যাপক গণহত্যা। ইহুদী মেজোরিটীর পোল্যাণ্ডকে খ্রিস্টান মেজোরিটী কান্ট্রী বানিয়ে দেয় পাইকারী হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে। শহরের রাস্তার প্রায় প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে ফাসি দিয়ে সিভিলিয়ান হত্যা করে।

এই সময় জার্মানরা ৩০ লাখ পোলিশ হত্যা করে, ২৫ লাখ পোলিশ নিজ আবাস থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, ৩০ লাখ পোলিশকে বন্দী করে দাস হিসেবে জার্মান কারখানা ও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠায়, ৮০০ মত গ্রাম পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।


এদিকে পোল্যাণ্ডের অন্যপাশে সোভিয়েতরা স্ট্যালিনের নির্দেশে শুরু করে আরেক পাইকারী হত্যাকাণ্ড যা কাতিন ম্যাসাকার নামে পরিচিত। যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তবাহিনী এনকেভিডি (পরে কেজিবি হয়) ২২ হাজার পোলিশ মিলিটারী, পুলিশ ও বুদ্ধিজীবী হত্যা করে। যুদ্ধের পরে গণকবর আবিষ্কৃত হলে রাশিয়া এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জার্মানীকে দায়ী করে। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রাশিয়ানদের অপকর্মের দলিলও বের হয়।


এই অত্যাচারের ফলাফল হিসেবে লোকাল রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠে। ওয়ারশ বিদ্রোহে ২ লক্ষের মত পোলিশ নিহত হয়।

তবে এই গণহত্যার একটি বিশেষ দিক ছিলো। জার্মানরা প্রথমেই পোল্যাণ্ডের এলিটদের হত্যা করে। যারা একটি দেশেকে রিপ্রেজেন্ট করে ও নেতৃত্ব দেয় তাদের হত্যা করে পুরো পোল্যান্ডকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে চায়। এই সময় নাৎসীরা হত্যা করে পোল্যাণ্ডের,

৩৯% ডাক্তার
৩৩% শিক্ষক
৩০% বিজ্ঞানী ও প্রফেসর
২৮% রাব্বী ও পাদ্রী
২৬% আইনজীবী

এই ফর্মূলা পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের লিবারেশন ওয়্যারের একদম শেষ দিকে করে যাতে এই দেশ কখনও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রজ্ঞায় দৃঢ় হতে না পারে, সর্বদা পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে থাকে।

তবে পোল্যাণ্ডকে নাৎসীরা প্ল্যান অনুযায়ী ধ্বংস করতে পারে নি। এখন পর্যন্ত ১৬ জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছে পোল্যান্ড থেকে যার মাঝে ১০ জনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। বেশির ভাগই ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি ও মেডিসিনে। তাছাড়া পোল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া অনেকেই ও তাদের অফস্প্রিং সেসব দেশে মেধার নজির রেখে চলছে। পোল্যাণ্ডই বিশ্বের প্রথম স্টেলথ ট্যাঙ্ক তৈরী করেছে।

লেখায়ঃ নাজমুস সাকিব ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments