য় পর্বের পর…

বর্মী মেজর লিয়াং ওয়্যারলেস হাতে নিতেই তার সাথে হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিত সব ঘটনা ঘটতে লাগলো, পরপর ১০ সদস্যের দুটি টিম লাপাত্তা। ৪র্থ৫ম কোন টিমের সাথে আর ওয়ারলেসে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কোন মেসেজের রিপ্লাই আসছে না। তার উপর বিজিবি বেসক্যাম্প থেকে লাঞ্চ করা মর্টার শেলগুলো মেজর লিয়াংয়ের অস্থায়ী এই ক্যাম্পের খুব কাছেই বিস্ফোরিত হতে লাগলো এবং সেইসাথে মর্টার ফায়ারিংয়ের তীব্রতাও বাড়ছে।

মেজর লিয়াং তার সাথে থাকা বাকী ৬০ সৈন্যকে জানিয়ে দিলেন তাদের এই মিশন আপাতত শেষ। এখন তাদের নতুন মিশন হলো প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া। মেজর লিয়াং এক্ষেত্রে একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। তিনি আর্টলারী ইউনিটের ৯ জন সৈন্যকে দিয়ে তিনটি মর্টার লাঞ্চার বসালেন এবং তাদেরকে মর্টার ফায়ার ওপেন করতে বললেন। তার নির্দেশমতো সৈন্যরা পাল্টা ফায়ার শুরু করলো। কিন্ত মেজর লিয়াং অন্য সদস্যদের নিয়ে মিয়ানমার সীমান্তের দিকে এগুতে লাগলেন। শুকনো জঙ্গল মাড়িয়ে মেজর লিয়াং ও তার দল প্রাণপনে এগিয়ে চলছিলো মিয়ানমার সীমান্তরেখা বরাবর। একটু আগেও যাদের চোখেমুখে ছিলো পৈচাশিক সাফল্যের আনন্দ এখন তারাই প্রানভয়ে ভীত!

সেই ০৯ জন সৈন্য যাদের আর্টিলারি মর্টার ফায়ারিংয়ের জন্য ফেলে এসেছিলো মেজর লিয়াং ও তার বাহিনী। মূলত সেই ০৯ সৈন্য বুঝে ফেললো যে মেজর লিয়াং তাদের ঢাল হিসেবে বিপদে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। কারণ তারা যেখান থেকে মর্টার ফায়ারিং করছিলো। বিজিবির নিক্ষেপিত মর্টার শেল সেখানে এসেই বৃষ্টির মত পড়তে লাগলো এবং মর্টার সহিত তিন বর্মী নিহতও হলো। তাই আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে বাকী ছয় সৈন্য মর্টার ফেলে রেখেই সীমান্তের পথ ধরলো। ওদিকে মোট ১৮ টি মর্টার তোপ থেকে ফায়ার হচ্ছিলো বিজিবির সীমান্তের কাছাকাছি বেসক্যাম্প থেকে সময়ের সাথে সাথে ফায়ারিং রেঞ্জও বাড়াতে লাগলো বিজিবি সদস্যরা। আর ঠিক একারনেই মেজর লিয়াংয়ের টিমের সামনে মর্টার শেল পড়তে শুরু করলো। ঘোর বিপদে পড়লো মেজর লিয়াং ও তার গোটা কমান্ডো বাহিনী। ঘড়িতে সময় তখন রাত টা বেজে ৫৬ মিনিট।

 

দেড় ঘন্টা আগের দৃশ্যপটঃ

পোস্টে হামলা হয়েছে এবং ১৬ বিজিবি সদস্য নির্মমভাবে শহীদ হয়েছে শুনে ঢাকায় থাকা ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্ণেল মাহবুবে আলম মেজর মুনতাসিরকে মুঠোফোনে বললেন, “আমাদের ১৬ জন সৈন্যের রক্তের দাম আছে” হয়তো এই মূল্য আমাদের সরকার দিতে পারবে না। তার হয়তো পাল্টা আক্রমণের কোন অনুমতি না দিয়ে কুটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করবেন বিষয়টা। আমাদের সৈন্যদের রক্ত তখন বৃথা যাবে কিন্ত আমাদের প্রাণ থাকতে আমরা এটা হতে দিবোনা। তিনি মেজর মুনতাসির কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

Young Man, You’ll Be The Incharge Of Oparation, Catch & Kill Them Anyhow. I Want To See Their’s Dead Body In Morning, Major! Your Time Start Right Now.

মেজর মুনতাসির সিও’র প্রত্যেকটি আদেশ মনে গেথে রাখলেন। তিনি দ্রুত ব্যাটালিয়নের ০৫ জন সিনিয়র অফিসার নিয়ে একটি অস্থায়ী অপারেশন কন্ট্রোল বোর্ড গঠন করলেন। অপারেশন মনিটরিংয়ের জন্য বসানো হলো পর্দা, কম্পিউটার, ও অন্যান্য বেস ক্যাম্পের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ঠিক রাখতে বসালেন ওয়ারলেস রাউটার। অপারেশনের নাম দেয়া হলো অপারেশন “কিলিং হান্ট”। উদ্দেশ্য দিনের আলো ফোটার আগেই জঙ্গলে ঘাপটি মেরে থাকা প্রত্যেক শত্রুসেনার মৃতদেহ ক্যাম্পে এনে জড়ো করা। আক্রমণকারী প্রত্যেক শত্রু সৈন্যকে ধরে ধরে হত্যা করা প্রয়েজনে মিয়ানমার সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা। টোটালি এটি একটি এ্যাটাকিং মিশন।

সিওর নির্দেশ অনুসারে আজকের পর আর এই মিশনের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ মিশনটি উপরমহল কর্তৃক অথরাইজড নয়। সর্বোপরি অপারেশনটি শেষ করতে হবে ২- ৩ ঘন্টার মধ্যে। মেজর মুনতাসিরের কাছে এখন প্রত্যেকটি মুহুর্তের গুরুত্ব অনেক। প্রথমেই তিনি প্রত্যেক বেসক্যাম্পে সীমান্ত লাগোয়া পোস্ট গুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স ও ভারী মেশিনগান পাঠাতে বললেন। তবে এক্ষেত্রে সব সদস্যকে পোস্ট থেকে নিরাপদ দূরত্বে পজিশন নিয়ে থাকতে এবং সুযোগ বুঝে ফায়ার ওপেন করার দিকনির্দেশনা দিলেন। মেজর মুনতাসিরের এই কৌশল বেশ কাজে দেয়। কারণ বর্মী বাহিনীর ৪র্থ৫ম দলটি মেজরের এই টেকনিকে ফেসে বিজিবির গুলিতে বেঘোরে মারা পড়ে।

মেজর মুনতাসির এবার ম্যাপ করে নিলেন। তিনি দেখলেন যে কয়টি বিজিবি পোস্টে হামলা হয়েছে সেগুলি পাহাড়ি জঙ্গল লাগোয়া পোস্ট। তার মানে শত্রুরা আশেপাশের জঙ্গলেই ওৎ পেতে আছে। হয়তো বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে নয়তো ওপারে। মেজর মুনতাসির দুটো দূর নিয়ন্ত্রিত আনআর্মড ড্রোন পাঠালেন। একটি উড়ে গেলো বাংলাদেশ অংশের জঙ্গলের ওপরে আরেকটি মিয়ানমারের অংশে। ড্রোণ থেকে পাঠানো লাইভ ফুটেজে ধরা পড়লো বাংলাদেশ অংশের জঙ্গলের ঠিক মাঝ বরাবর ছোটখাটো একটি বেসক্যাম্প গেড়েছে বর্মী বাহিনী। ড্রোণ থেকে পাঠানো ফুটেজ অনুসারে শত্রুদের অবস্থান সম্পর্কে আরো বেশকিছু ধারনা পেলেন মেজর মুনতাসির

তিনি দেখলেন যে জঙ্গলে শত্রুরা অস্থায়ী ঘাটি গেড়েছে সে জঙ্গলটি বেশ ভালোভাবে এই ব্যাটালিয়নেরই দুটি বেসক্যাম্পের মর্টার ফায়ারের আওতায় পড়ে। দেরী না করে মেজর মুনতাসির সেই বেসক্যাম্প দুটিতে থাকা সকল মর্টার লাঞ্চার ফিট করে জঙ্গল বরাবর শেলিং করার নির্দেশ দিলেন। দুটি বেসক্যাম্পে ০৯ টি করে মোট ১৮ টি মর্টার তোপ ছিলো। মেজরের নির্দেশ পেয়ে প্রত্যেকটি মর্টার গর্জে উঠলো। শুরু হলো অনবরত শেলিং। মেজরের নির্দেশে ফায়ারিং এড়িয়া আরো বাড়তে লাগলো। কিছু মর্টার ফায়ার করছে জঙ্গল বরাবর। আর কিছু মর্টার শেল গিয়ে পড়ছে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে, যাতে শত্রুদের পালানোর পথ আটকানো যায়। মর্টার ফায়ারের ফলে বর্মী কমান্ডোদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। যুদ্ধের ময়দানে যেটা সবচেয়ে জরুরী।

মেজর মুনতাসির এবার ড্রোন থেকে পাঠানো নতুন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখলেন শত্রুরা মিয়ানমার সীমান্তের দিকে পিছু হটছে। কিন্ত না এটা হতে দেয়া যাবে না। অপারেশনটির নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক শত্রুর লাশ চাই। ওদিকে অপারেশন শুরুর দিকে মেজর মুনতাসির চিটাগং এয়ারফোর্স বেসে মেসেজে জানিয়েছিলেন একজন বিজিবি সৈনিক ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে তাকে খুব দ্রুত হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিতে হবে। একটি হেলিকপ্টার দরকার। এয়ারফোর্স ঘাটি থেকে একটি এমআই-১৭ ট্রান্সপোর্ট হেলিকপ্টার উড়ে এলো বিজিবি সদরে। কিন্ত বাস্তব প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন। মেজর মুনতাসির চপারটিকে অপারেশনের কাজে লাগাবেন বলেই ডেকেছেন।

ঘড়ির কাটায় সময় তখন টা ২০ মিনিট। অপারেশন কিলিং হান্ট -কে পূর্ণতা দিতে চুড়ান্ত পদক্ষেপ নিলেন মেজর মুনতাসির। ক্যাপ্টেন ইরফান কে নেতৃত্ব দিয়ে ৩০ সদস্যের একটি বিশেষ অপারেশনাল টিম গঠন করলেন। এই টিমে ছিলেন বিজিবির চৌকস সব বাছা বাছা সদস্যরা। অস্ত্র হিসেবে সবার কাছে ছিলো একটি করে টাইপ-৫৬ রাইফেল, ৫.৫ বোরের পিস্তল, রকেট লাঞ্চার, হ্যান্ড গ্রেনেড ইত্যাদি। অপারেশনাল এই টিমটি সরাসরি বর্মী কমান্ডোদের সাথে লড়াই করবে।

হেলিকপ্টার চলে এলো। পাইলটকে মেজর মুনতাসির সব খুলে বললো। পাইলট প্রথমে একটু ইতস্ততবোধ করলেও নিহত বিজিবি সদস্যদের কথা শুনে সে রাজী হলো। তবে একবারই ট্রুপস ড্রপ করে ফিরে আসবেন তিনি। এই শর্তে রাজী হলেন কারণ কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে এক্ষেত্রে যোগাযোগ করা যাবেনা। কারণ চপারটি মিয়ানমার সীমান্তে কেনো গেলো এজন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর বেশিক্ষণ কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ না রাখলেও সমস্যা তাই যা করার দ্রুত করতে হবে।

মেজর মুনতাসির ৩০ সদস্যের টিমকে হেলিকপ্টারে উঠতে বললেন দ্রুত। ক্যাপ্টেন ইরফান পাইলটের সাথে বসলো। অপারেশনাল টিমের সৈন্যদের নিয়ে কপ্টারটি ফ্লাইং করলো। তাদেরকে বিদায় জানালো মেজর মুনতাসির। একসময় কপ্টারটি মিয়ানমার সীমান্তের জঙ্গলের দিকের আকাশে মিলিয়ে গেলো…(চলবে)

 

 

বিঃদ্রঃ এটি নিছক একটি গল্প এবং লেখকের মস্তিষ্কের একটি আবিষ্কার মাত্র। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। অতিতে বা অদূর ভবিষ্যতে এই গল্পে উল্লেখিত কোন স্থান, কাল, চরিত্র কোন জীবিত বা মৃতব্যাক্তির কাহিনীর সাথে মিলে গেলে সেটি নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার, এজন্য লেখক কোনভাবেই দায়ী নন। সেইসাথে এই গল্পের সকল ছবিই মাত্র প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

লেখায়ঃ এইচ এম মেহেদী হাসান অর্নব ও এডমিন কর্তৃক সংযোজিত।

Facebook Comments

comments