ছবিতে যে ইঞ্জিনটি দেখছেন এটি কোন সাধারন ইঞ্জিন নয়। এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী বিমান SR-71 Blackbird এর ইঞ্জিন৷ এই বিমান ৩৫০০+ কি.মি. বেগে ছুটতে সক্ষম হওয়ার মূল অবদান ছিলো তার ইঞ্জিনের৷ ইঞ্জিনটির বিশেষত্ব এই যে এতে সাধারন যুদ্ধবিমানের Turbojet ও মিসাইলের Ramjet দুইধরনের ইঞ্জিনের মত চলতে সক্ষম৷ এরই ফলে বিমানটি এত দ্রুতগামী ছিলো।

আসেন দুই ধরনের ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে জেনে নেইঃ-

টার্বোজেট হচ্ছে সে সমস্ত ইঞ্জিন যা সাধারন যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা হয়৷ এই ইঞ্জিনে মূলত ৬টি অংশ থাকে৷

১. প্রথমে থাকে একটি ফ্যানের মত ব্লেড যা বাতাস টেনে ভিতরে নিয়ে নেয়।

২. তারপর থাকে কমপ্রেসর যা ভিতরে ঢোকা বাতাসকে সংকুচিত করে৷ এর দ্বারা বাতাসের আয়তন কমিয়ে চাপ বৃদ্ধি করা হয়।

৩.এরপর থাকে ঐ উচ্চচাপীয় বাতাসকে পোড়ানোর অংশ বা Combustion Chamber।

৪. বাতাসকে পুড়িয়ে তারপর টার্বাইনকে ঘোরানো হয় যা শাফ্ট দ্বারা যুক্ত কমপ্রেসরকে ঘূর্ননরত রাখে৷

৫. এরপর থাকে মিক্সার। এটি সংকুচিত বাতাসের উপর ফুয়েল বা জ্বালানি স্প্রে করে এবং ব্যাটারি দ্বারা তড়িৎ স্ফুলিঙ্গ বা স্পার্ক তৈরি করে জ্বালানিযুক্ত বাতাসে আগুন ধরিয়ে দেয় যাতে প্রচন্ড জোরে বাতাস পুড়তে থাকে ও বিস্ফোরণের মত প্রচন্ড শক্তি তৈঁরি করে৷

৬. সবশেষে থাকে নজেল যা বাতাসকে পিছন দিয়ে বিস্ফোরনের মত বের করে দেয় যা বিমানকে থ্রাস্ট যোগায় থলে বিমান সামনে আগাতে পারে।

Schematic diagram of Ramjet engine

রামজেট ইঞ্জিনের স্কিম্যাটিক ডায়াগ্রাম

অন্যদিকে Ramjet ইঞ্জিনের গঠন একটু সহজ৷ এক্ষেত্রে ইঞ্জিনের ভিতরে একটি Conical Spike লাগানো থাকে। ফলে বাতাস টার্বোজেটের তুলনায় বেশি সংকুচিত হয়৷ তারপর এতে ফুয়েল স্প্রে করে তড়িৎ স্পার্ক দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে মিসাইলকে অনেক শক্তি দিয়ে সামনে আগাতে সাহায্য করে। এ ধরনের ইঞ্জিন বিভিন্ন ক্রুজ মিসাইলে ব্যবহার করা হয়৷ যাদের গড় গতিবেজ ম্যাক ৩-৪ পর্যন্ত হতে পারে।

SR-71 এর ইঞ্জিন দুই ধরনের উপায়েই চলতে সক্ষম। বিমানের স্পিড ম্যাক ২.২ এর নিচে থাকলে তখন বিমানের ইঞ্জিন টার্বোজেটের মত কাজ করে৷ ফলে বাতাসকে ফ্যান দ্বারা ভিতরে টেনে নেয়৷ পরে তাতে সংকুচিত করে জ্বালানি স্প্রে করে বিস্ফোরন ঘটানো হয় এবং নজেল দ্বারা তা বাইরে বের করা হয়৷

বিমানের স্পিড যখনই ম্যাক ২.২ এর উপরে যেতে থাকে বিমানের ইঞ্জিনের কাজের প্রনালী Turbojet থেকে Ramjet এর মত কাজ করতে থাকে৷ স্পিড বাড়ালে ইঞ্জিনের সামনে লাগানো Conical Spike লম্বা ও সরু থেকে খাটো ও মোটা হতে থাকে৷ সর্বোচ্চ বেগ ৩.২ তে গেলে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬ ইঞ্চি কমে যায়৷

ফলে ইঞ্জিনের ইনলেটের জায়গায় কমে গিয়ে বাতাসকে আরো বেশি সংকুচিত করে ৷ তাছাড়া তখন বাতাসের ফ্যানে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় ও ব্যবহার করা হয় ৬টি বাইপাস টিউব যা সংকুচিত বাতাসকে টিউব দ্বারা টারবাইন পেরিয়ে দহনের স্থান বা Combustion Chamber এ নিয়ে যায়।

Lockheed SR-71 Blackbird Inlet

ব্লাকবার্ডের ইনলেট

Ramjet এ সাধারনত জ্বালানী বেশি ব্যয় হয় তবে SR-71 এ এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে বেশি বেগে এর জ্বালানী সাশ্রয়ের হারও বেশি থাকে।

ম্যাক ২.২ এ পৌছালে Air Inlet এর পাশাপাশি Centrobody Bleed নামক অংশও বাতাস থেকে অতিরিক্ত বায়ু শোষন করে ইঞ্জিনে যোগান দেয় ফলে দহনের জন্য আরো বেশি বাতাস পাওয়া যায়৷ ফলে জ্বালানী সাশ্রয়ের হারও অধিক বেগে বৃদ্ধি পায়৷ এট অধিক হারে জ্বালানী দহনের পর ইঞ্জিনে এত তাপ বৃদ্ধি পায় যা বিমানের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে৷

আর তা রুখতে বিমানের ইঞ্জিনের দেয়ালে একটি দরজা সদৃশ অংশ থাকে যা বিমানের ইঞ্জিনের পাশ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করে৷ তাছাড়া ইঞ্জিনটি নির্মান করা হয়েছিলো কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফলে বিমানের ইঞ্জিন অধিক তাপ সহ্য করতে সক্ষম ও অধিক বেগে দীর্ঘক্ষন ছুটতে সক্ষম হতো।

Su-35 এ ক্রুজিং স্পিডে যেখানে ৮৬.৩ কিলোনিউটন থ্রাস্ট তৈরি হতো SR-71 এ সেখানে থ্রাস্টের মান ১৫১ কিলোনিউটনের সমান৷ অধিক বাতাসের যোগান ও বেগের কারনে এর সার্ভিস সিলিং ও ছিলো ৮৫০০০ ফুটের মত যা এফ-২২ থেকেও ২৪০০০ ফুট বেশি৷

Facebook Comments

comments